বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন

ঈদ এলে অভাব আরও দৃশ্যমান হয় ছিন্নমূলে

সানাউল হক সানী
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১ মে, ২০২২
  • ১৬৬ বার

ছোট্ট বাড়ি, ফসলি জমি আর এক চিলতে উঠান ভরা হরেকরকমের গাছ। দুই সন্তান নিয়ে বেশ কেটে যেত রোকসানা-কলিম দম্পতির। কিন্তু এখন কিছুই নেই। মেঘনার করালগ্রাসে বছর পাঁচেক আগে হারিয়েছেন সব। এখন থাকেন কামরাঙ্গীরচরের ছোট্ট এক কক্ষের বাসায়। কিন্তু সেই ‘সুখও’ আর থাকল না। বছর দুয়েক আগে মারা যান কলিম মিয়া। এরপর দুই সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় হয় রাস্তার পাশে। সব থাকা রোকসানার পরিচয় এখন ছিন্নমূল। ঈদ বলতে আলাদা কিছু নেই, দুমুঠো খাবার জুটলেই আনন্দ। ১১ বছরের সন্তান রুবেল মোটর মেকানিকের দোকানে কাজ শিখছে। দৈনিক পঞ্চাশ টাকা পায়।

ঈদ কেমন কাটবে- এমন প্রশ্নে নীলক্ষেত-পলাশী রোডের ফুটপাতে রাতের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত রোকসানার চোখে যেন মেঘ জমেছে। বলতে পারলেন না কিছুই। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বললেন দিনটা যন্ত্রণার। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ঠিকানাবিহীন এ শহরে দুমুঠো ভালো খাবার জুটলেই খুশি।

কেবল রোকসানাই নয়, হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষের কাছে ঈদের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। প্রতিবছর ঈদ আসে, ঈদ যায়- এসব সব-হারানো মানুষের মনে নেই আনন্দ। খুশির জোয়ারে সবাই যখন ভাসে, তখন নীরবে চলতে থাকে তাদের বুকফাটা কান্না। অনেকে হাতড়ে বেড়ান অতীতের সেই সোনামাখা দিনগুলো- যদি ফিরে আসত সব! অনেকের আবার অতীত বলতে কিছুই নেই। জন্ম থেকেই রাস্তায়। অনেকের জন্ম ফুটপাতে, বেড়ে ওঠাও ফুটপাতে। ওরা জানে না ওদের বাবা-মা কে?

মালিবাগ রেলগেটের কাছেই একটি খুপড়িতে বসবাস করেন আলেকজান বিবি। বয়সের সঠিক হিসাব দিতে না পারলেও কথাবার্তায় বোঝা যায় আশি ছাড়িয়েছে। ঈদের দিন কী করবেন! চোখেমুখে বিস্ময়- যেন অদ্ভুত কোনো প্রশ্ন। চোখ ডলতে ডলতে বললেন, ‘ঈদ বলতে আলাদা কিছু নেই। কেউ যদি ভালো একটু খাবার দিয়ে যায়, তাতেই খুশি।’

তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির দিন আসছে। ঝামেলা হয়। পানি ঢুকে ভিজে যায় সব। দুনিয়ায় আমার কেউ নেই, যে ঠিক করে দেবে। অনেক আগে স্বামী রিকশা চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘনায় মারা গেছে। আর একমাত্র ছেলে মারা গেছে অসুখে। এখন আমি একা। শরীরে শক্তি নেই, তাই হাঁটতে পারি না, রাস্তার পাশে বসে থাকি, মানুষ যা দেয়, তা দিয়ে কোনোমতে চলি। ঈদের দিন সবাই নতুন কাপড় পরবে; আর আমরা অহন শতছিন্ন নোংরা কাপড় পইরা আছি বাবা। খাওয়ার কিছু নাই। একটা লোকে সকালে দুইটা রুটি দিছে, তা খাইছি। অহন ক্ষিদা লাগছে; কোনো খাওয়ার নাই।’

পাশেই রেললাইন ধরে একা একা খেলছিলেন রাজু মিয়া। বাসা কোথায় জানতে চাইলে বলেন, ‘বাসা নেই। রেললাইনের পাশেই ঘুমাই।’ সঙ্গে আর কে কে থাকে, জবাবে রাজু বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে রেললাইনের পাশেই থাকি। বাবা-মাকে চিনি না। কখনো দেখিও নাই। বস্তিতে এক কাকির লগে থাকতাম। সে এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। তাই রেললাইনের পাশেই থাকি। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়েই চলে যায়। এরপর আবার খেলতে নেমে যাই। আরও কয়েকজন আছে সমবয়সী। সবাই মিলে দিন-রাত খেলাধুলা করি।’

ঈদের দিনের পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, ‘অন্য বছরগুলোতে রেললাইনের পাশে অনেকেই ভালো খাবার নিয়ে আসে। একবেলা ভালো খাবার পাওয়া যায়। অন্য কিছু পাই না। দুই বছর আগে একজন নতুন জামা দিয়েছিল। গত বছর কেউ দেয়নি। এ বছরেরটা জানি না।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com