একটি নাটক জনপ্রিয় হয় তখনই, যখন নায়ক-নায়িকার রসায়ন দর্শকের মনে দাগ কাটে। ফলে সেই সব নায়ক-নায়িকা দর্শকের কাছে পরিচিতি পায় জুটি হিসেবে। নাটকের জন্মলগ্ন থেকেই এ জুটিপ্রথা ছিল, আছে এখনো। গেল কয়েক বছরে এমন অনেক জুটি গড়ে উঠেছে, যাদের নামেই জনপ্রিয় হচ্ছে নাটক। এবারের ঈদেও এমন কিছু জুটির নাটক দেখেছেন দর্শক। আমাদের আজকের আয়োজন সেই সব জুটি নিয়ে। লিখেছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
মোশাররফ-তানজিন তিশা
তরুণ প্রজন্মের ক্রাশ, সেই সঙ্গে অভিনয়জ্ঞান অসাধারণ। গত কয়েক বছর ধরে নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রীও তিনি। বলছি তানজিন তিশার কথা। প্রতি ঈদেই তাকে নিয়ে আলাদা আগ্রহ থাকে দর্শকদের। এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বেশ কয়েকজন অভিনেতার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করলেও তিশা সবচেয়ে আলোচিত হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের সঙ্গে কাজ করে। সাগর জাহানের ‘চিত্রা তার অপেক্ষায়’ ও ‘শেষটা আমার ছিল’, এস আর মজুমদার আশিকের ‘বউ-এর বয়স ষোল’ নাটক-টেলিছবিগুলো দর্শকরা যেমন পছন্দ করেছেন; তেমনি সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। মোশাররফ বলেন, ‘গল্প আর নির্মাণ ভালো হলে দর্শক এখনো নাটক দেখেন- সেটার প্রমাণ আবারও পেয়েছি। তিশা আর আমার জুটির সবগুলো কাজ নিয়েই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুনেছি সবার কাছ থেকে।’ তানজিন তিশা বলেন, ‘মোশাররফ ভাই অনেক বড়মাপের অভিনেতা। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা চমৎকার। ভালো লাগছে এ কারণে যে, আমাদের জুটির কাজগুলো নিয়ে দর্শকের বেশ সাড়া পাচ্ছি।’
নিশো-মেহজাবিন
চোখে-মুখে-অভিব্যক্তিতে কেবল অভিনয় আর অভিনয়। প্রতিটি চরিত্র বাস্তবরূপে ফুটিয়ে তোলেন সুনিপুণভাবে। বিশেষ করে উৎসব মানেই মেহজাবিন চৌধুরীর নাটক। বিপরীতে জুটি? সেটা না বললেও চলবে। কারণ গত কয়েক বছরে আফরান নিশোর সঙ্গে এ লাক্স তারকার জুটি দর্শক সাদরে গ্রহণ করেছেন। এবারের ঈদে নিশো-মেহজাবিনের একাধিক নাটক-টেলিছবি দর্শকের মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শিহাব শাহীনের ‘আমি তুমি আর একটি শবদেহ’, নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘ম্যাটিনি শো’, ভিকি জাহেদের ‘চম্পা হাউজ’, কাজল আরেফিন অমির ‘হেল্প মি’, রুবেল হাসানের ‘টু বাই টু লাভ’ প্রভৃতি। নিশো বলেন, ‘নতুন-পুরনো অনেকের সঙ্গে অভিনয় করি। সেই দিক থেকে মেহজাবিনকে ভালোই বলব। বিশেষ করে রোমান্টিক আর ইমোশনাল জায়গায় ও চমৎকার।’ মেহজাবিন বলেন, ‘গেল তিন বছরে আমরা একসঙ্গে বেশ কিছু ভালো নাটক করেছি। আর দর্শকও প্রায় সবগুলো কাজই সাদরে গ্রহণ করেছেন।’
অপূর্ব-সাবিলা
অপূর্বকে একসময় জুটি হিসেবে বেশি দেখা যেত মেহজাবিন ও তানজিন তিশার সঙ্গে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সাবিলা নূরের সঙ্গে তার রসায়ন জমে উঠেছে। এবারের ঈদে দুজনে আলো ছড়িয়েছেন একাধিক নাটক-টেলিছবিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শিহাব শাহীনের ‘অঘটন’, ‘নিঃশব্দের আলো’ ও ‘রুনু ভাই ২’, মাহমুদুর রহমান হিমির ‘শুধু তুমিময়’, জাকারিয়া সৌখিনের ‘ডিগবাজী’ ও ‘ফল ইন লাভ’, রুবেল হাসানের ‘এক জনমে ভালোবেসে’, ‘প্রিয় খেয়ালে’ ও ‘স্পাই লাভ’, মহিদুল মহিমের ‘প্রিয়জন’ প্রভৃতি। অপূর্ব বলেন, ‘নাটকের গল্প ও চরিত্রকে গুরুত্ব দিয়েই অভিনয়ের চেষ্টা করি। কারণ দর্শক আমার কাছে থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করেন। তাই সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই অভিনয়ের চেষ্টা করি। সাবিলা নূর নিঃসন্দেহে ভালো অভিনেত্রী। আমাদের অভিনীত নাটকগুলো দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করছেন।’ সাবিলা নূর বলেন, ‘নির্মাতারা যখন ভালো গল্প ও চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, তখন অন্য কিছু বিবেচনা করি না। তবে পছন্দের সহশিল্পী থাকলে তো ভালোই লাগে। অপূর্ব ভাইয়া পছন্দের অভিনেতা। তার সঙ্গে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’
জোভান-ফারিন
এবারের ঈদে ফারহান আহমেদ জোভানের প্রায় ৪০টি নাটক প্রচার হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু নাটকে তার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিন, যার সবগুলোই দর্শক পছন্দ করেছেন। জোভান-ফারিন জুটির অনবদ্য রসায়ন দেখা গেছে তুহিন হোসেনের ‘ইনডোর প্রেম আউটডোর ভালোবাসা’, মাবরুর রশিদ বান্নাহর ‘হাঁটতে চাই তোমার পাশে’, সাইদুর ইমনের ‘তোমার আমি’ নাটকগুলোয়। জোভান বলেন, ‘আমাদের জুটির কাজগুলো নিয়ে দর্শকের ভালো সাড়া পাচ্ছি। সেই সঙ্গে সহকর্মী ও পরিচিতজনরা পজিটিভ রেসপন্স করেছেন।’ ফারিন বলেন, ‘ঈদে অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে জোভান আর আমার জুটির কাজগুলো নিয়ে সবাই প্রশংসা করছেন।’
ফারহান-কেয়া পায়েল
বর্তমান সময়ে নতুনদের মধ্যে নাটকে যারা আলো ছড়াচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মুশফিক আর ফারহান ও কেয়া পায়েল জুটি। দুজনের সাবলীল অভিনয় দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে সহজেই। এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ফারহান-কেয়া পায়েল জুটির অনবদ্য অভিনয় দেখা গেছে শিহাব শাহীনের ‘থাকবো না যখন’, জাকারিয়া সৌখিনের ‘ওয়েডিং ক্রাশ’, ‘তুমি যদি বলো’ ও ‘ভুলো না আমায়’, মেহেদী হাসান হৃদয়ের ‘সুইট কাপল’, মহিদুল মহিমের ‘নসিব’সহ একাধিক নাটক-টেলিছবিতে। ফারহান বলেন, ‘সহশিল্পী হিসেবে কেয়া পায়েল অসাধারণ। তার সঙ্গে অনেক নাটক করেছি। প্রায় সবগুলোতেই দর্শক প্রতিক্রিয়া পজিটিভ।’ কেয়া পায়েল বলেন, ‘ফারহান ভাই খুবই মজার মানুষ। নাটকে যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন, তিনি বাস্তবে একেবারেই অন্যরকম। পুরো শুটিং ইউনিট মাতিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। আমি নিজেও তার ভক্ত।’