তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে (জানুয়ারি -মার্চ) ২৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২.২৩ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) পরিসংখ্যানে এ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
অটেক্সার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের প্রথম তিন মাস জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ২৪৭ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৫২ কোটি ৭১ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। এ হিসেবে জানুয়ারি-মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বা দেশটির আমদানি বেড়েছে ৬২.২৩ শতাংশ।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৫৯২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল। ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে আমদানি কমে যায়। গত বছর মার্কিন বাজারে পোশাকের আমদানি হয় ৫২২ কোটি ডলারের। এ হিসেবে ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের আমদানি কমেছিল ১১.৮২ শতাংশ। ২০২১ সালে আমদানি হয় ৭১৪ কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ডলারের। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে আমদানি বেড়েছে ৩৬.৬৮ শতাংশ।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল টানা ৪ মাস ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির পর ধনাত্মক বা ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুনে রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেও গতি ছিল মন্থর। সেই গতি বাড়তে শুরু করে সেপ্টেম্বরে। চলমান করোনা মহামারিতেও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রপ্তানি ছিল অনেক বেশি উৎসাহব্যঞ্জক। বৈশ্বিক লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ক্রেতারা ক্রমেই ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করছেন বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বরাবরের মতো পোশাক রপ্তানিতে চীন শীর্ষস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে ৫৩২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেন চীনা উদ্যোক্তারা। ওই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ২৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পর দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে দেশটি ৪৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯.৮৬ শতাংশ বেশি। তাদের রপ্তানির পরিমাণ ১৭.৩৯ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যথাক্রমে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। চলতি বছরের ৩ মাসে ভারত ১৫০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। দেশটির প্রবৃদ্ধি ৫৩ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করে ১৪৬ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৬২.৩১ শতাংশ।
পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশে আসার গতি সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। শুধু চীন নয়, ক্রয়াদেশ সরে আসছে এমন দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াও। পোশাক শিল্প মালিকদের দাবির সঙ্গে মিলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনার তথ্যও। নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের এক্সটারনাল ইকোনমিক্স শাখা থেকে প্রকাশ পায় তৈরি পোশাকের প্রান্তিক পর্যালোচনা শীর্ষক প্রতিবেদন। মার্চে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরের এ ধারা উঠে এসেছে।
পোশাকশিল্প মালিকরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির একটা প্রবণতা আছে। এ বৃদ্ধির পুরোটাই স্থানান্তর না। অর্থাৎ ক্রয়াদেশ যে বাড়ছে তার মধ্যে চাহিদা বৃদ্ধি ও স্থানান্তর দুটোই আছে। স্থানান্তর হচ্ছে মূলত যে ক্রয়াদেশ চীনারা পেতো সেটা। এছাড়া কিছুটা ভিয়েতনাম থেকেও হয়েছে। দেশটিতে কোভিডের প্রভাবে লকডাউন কার্যকর হওয়ার ফলে তখন ক্রয়াদেশগুলো বাংলাদেশে সরে এসেছে। সামগ্রিকভাবে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির যে গতি, তা কোভিড-পরবর্তী অতিরিক্ত চাহিদার কারণে। ক্রেতাদের মজুত শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ক্রয়াদেশ হঠাৎ করেই বেড়েছে। একটা পর্যায়ে উপচে পড়েছে।
এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন হিসেবে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে।