রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন

শাহ্ আব্দুল হান্নান ছিলেন ইসলামিক স্কলার

এ জেড এম শামসুল আলম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২
  • ২১২ বার

শাহ্ আব্দুল হান্নান আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। একই সাথে আমরা এমএ পাস করেছি। সেই সুবাদে অনেক আগে থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। দুজনের মধ্যে ছিল ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব। ছাত্রজীবন থেকেই। চাকরিজীবনে শাহ্ আব্দুল হান্নান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মহাপরিচালক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ যেখানেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই মেধার সাক্ষর রেখেছেন।

তার সবচেয়ে বড় সফলতা হলো দেশের অর্থনীতি বিনির্মাণে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু ও দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কার করা। তার মেধা জাতির জন্য কাজে লেগেছে এটি ভেবে বেশ ভালো লাগে। তিনি তার কাজে ও কথায় বেশ সৎ ছিলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে তার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। তাদের সাথে তিনি খুব ভালো ব্যবহার করতেন। এ জন্য কর্মচারীরাও তার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রেখে তার কাজে সহযোগিতা করতেন।

শাহ্ হান্নান ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতেন, গবেষণা করতেন। তার অনেক বই আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। তার বই থেকে তরুণ সমাজ উপকৃত হতে পারে। আমিও শতাধিক বই লিখেছি। এর বেশির ভাগই ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা। এর মধ্যে ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী অর্থনীতির রূপরেখা, ইসলামী চিন্তাধারাÑ এসব বিষয় নিয়ে লিখেছি বেশি। আমি ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে লিখেছি। কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শেও আমি লিখি না। আমার লেখা থিওরিটিক্যাল। তারপরও অনেকে আমাকে একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী মনে করেন।

শাহ্ আব্দুল হান্নানও অবসরের পর লেখালেখি করতেন। তার লেখা থিওরিটিক্যালের সাথে ব্যবহারিকও ছিল। তিনি একজন ইসলামিক স্কলার ছিলেন। অনেক সংগঠন বিভিন্ন সময় আলোচনা সভা, সভা-সেমিনার হলে আমাকে বক্তা হিসেবে ডাকতেন। সেখানে গিয়ে দেখতাম শাহ্ আব্দুল হান্নানও বক্তা হিসেবে আছেন। তার কথা শুনতাম। তিনি আলোচক হিসেবেও বেশ ভালো ছিলেন। তার কথা মানুষ মনোযোগ দিয়ে শুনত।

আমি ইসলামী বিষয়ে লেখালেখি করি। এ জন্য শাহ্ আব্দুল হান্নান আমার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতেন। আমার কাছে প্রায়ই আসতেন। লেখালেখির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। আমার বই নিয়ে যেতেন। তিনি অনেক বই পড়তেন। আমার বই পড়ে তার ভালো-মন্দ মতামত আমাকে জানাতেন।

ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। ইসলামের প্রতিটি শাখায়ই তার বিচরণ ছিল। ইসলামের প্রতি তার এই যে আগ্রহ তার জন্য আমার ভালো লাগত। তিনি সবসময় যুবসমাজকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতেন। তাদেরকে আলাদাভাবে দেখতেন। কারণ, তিনি মনে করতেন, যুবসমাজ যদি ইসলামের বিধি-বিধানগুলো সঠিকভাবে প্রতিপালন করে তাহলে দেশের চিত্র বদলে যাবে। দেশ দুর্নীতিমুক্ত, ঘুষমুক্ত ও উন্নত হবে। দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে। এ জন্য তিনি যুবকদের নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতেন। তাদের সঠিক পথে রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালাতেন।

শাহ্ আব্দুল হান্নান অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। শেষ বয়সে তাকে দেখতাম সবসময় তার হাতে কোনো না কোনো লেখার কপি থাকত। থাকত তার লেখা নানা ধরনের বই। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তিনি সেগুলো মানুষের মাঝে বিলি করতেন। তিনি মনে করতেন, শুধু মুখে মুখে ইসলাম বললেই হবে না, বাস্তবজীবনেও এর প্রয়োগ থাকতে হবে। মানুষ যেন কাউকে দেখে বুঝতে পারে এটিই ইসলামের সঠিক চিত্র। এ জন্য তিনি নিজেও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। তাকে হারিয়ে দেশ একজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছে। তার অবদান আমাদের মনে রাখা উচিত এবং তার বই ও লেখালেখি তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া দরকার। তাহলেই দেশে তার মতো আদর্শবান মানুষ তৈরি হবে।
লেখক : সাবেক সচিব ও ইসলামী চিন্তাবিদ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com