শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

হঠাৎ করেই মাথাভাঙ্গা নদীতে ভাসছে মরা মাছ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২
  • ৭৭ বার

হঠাৎ করেই চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্রসহ পুরো জেলার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদীতে প্রচুর মরা মাছ ভেসে উঠছে। একই নদীর পানিতে বিকট দুর্গন্ধসহ পানির রংও পরিবর্তন হয়ে অনেকটা কালো আকৃতি ধারণ করেছে। সোমবার (১ আগষ্ট) রাতে থেকে চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও আলমডাঙ্গা উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীর পানিতে এ চিত্র দেখা যায়। মাথাভাঙ্গা নদীর হঠাৎ এই অস্বাভাবিক আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। আজ মঙ্গলবার (২ আগষ্ট) বিষয়টি তদন্তে বিশেষজ্ঞ দল মাথাভাঙ্গা নদীর বিভিন্ন স্পট পরিদর্শন ও নদীর পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে বলে জেলা মৎস্য বিভাগ সময়ের সমীকরণকে জানায়।

এদিকে, মরা ও অর্ধমরা মাছ ভেসে উঠতে দেখে সাধারণ মানুষ ভিড় করে নদীর দুই ধারে। এছাড়া অনেকেই মাছ ধরার নেশায় নেমে পড়েন নদীর পানিতে। চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড় ও মালোপাড়াসহ নদী সংলগ্ন মহল্লাগুলোতে নদীর দুই প্রান্তে শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাল ও মশারি নিয়ে নদীতে নেমে মাছ ধরতে দেখা যায়। জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর, আসমানখালি, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে একই অবস্থা।

জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, পানিতে অক্সিজেনের সংকট অথবা নদীর কোনো অংশে পাট জাগ দেওয়ার কারণেও মাছ মরার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে পানিতে কালো এক ধরণের স্তরও দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। জেলা প্রশাসন বলছে, ইতোমধ্যেই এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হবে এ ঘটনার সঠিক কারণ কী।

নদী তীরের বাসিন্দারা জানান, গতকাল সোমবার বিকেলের পর থেকে মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছ ভেসে উঠেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে মাছ ধরার জন্য নদীর দিকে ছুটে যায়। বালতি কিংবা গামলা নিয়ে মাছ ধরে নিয়ে আসে। পুঁটি, টেংরা, তোড়া, বেলে প্রভৃতি দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠেছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী হোসেন মিয়া বলেন, ‘কেউ দুই কেজি, কেউ তিন কেজি মাছ নদী থেকে নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরে গেছে। তবে রাত হওয়ায় ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না নদীর পানি। পানিতে কিছু থাকলেও বোঝা যাচ্ছে না।’

মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, ‘মাথাভাঙ্গা নদীর পানি নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। আমরা বারবার বলছি, মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতে হবে। পৌরসভা শহরের আবর্জনা ফেলে নদীতে। ড্রেনের পানি গিয়ে পড়ছে নদীতে। ঠিক কী কারণে এখন মাছ মরছে, সেটা তদন্ত চাই। সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর নদী পরিদর্শন করা হয়েছে। আর আমি শুনেছি দামুড়হুদা উপজেলাতেও একটি স্পটে এরকম মাছ মারা যাচ্ছে। দামুড়হুদা ব্রিজ থেকে নদীতে দেখা যাচ্ছে পানির ওপর এক ধরণের কালো স্তর। আজ মঙ্গলবার আরও গভীরভাবে তদন্ত করা হবে।’

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম, ‘প্রচ- গরমের পর হঠাৎ বৃষ্টির কারণে নদীতে অ্যামোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে এবং অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে মাছ মরে ভেসে উঠতে পারে। তাছাড়া, মাথাভাঙ্গা নদীর পানি বিভিন্ন কারণে দূষিত হয়েও পড়েছে। আর কোথাও পাট জাগ দেওয়া হয়েছে কিনা সেটাও জানার বিষয়। এ কারণেও মাছ মারা যেতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শামীম ভূঁইয়া বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীতে মরা মাছ ভাসার বিষয়টি শুনেছি। আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। যতটা জানতে পেরেছি, নদীর পানির ওপর এক ধরণের কালো তেল-তেলে স্তরের কথা। তবে বিষয়টি আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়ে মঙ্গলবার ব্যাপারটি আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হবে। জেলা মৎস্য বিভাগকে জেলা প্রশাসক স্যার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য ইতঃমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন।

এসময় তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, যেহেতু ঠিক কী কারণে মাছ মারা যাচ্ছে, সেটি এখনি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এবং একটি কালো তেল জাতীয় স্তরের বিষয়েও শোনা যাচ্ছে, তাই এখনি এই মরা মাছ না খাওয়ায় ভালো।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি মৎস্য বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি তদন্ত করে দেখার জন্য। গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com