যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ছুরি হামলার সময় বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদিকে মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যে ১০-১৫ বার কোপানো হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে শতকা ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেখক মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই আচমকা এক যুবকও উঠে পড়ে। প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো ওই ব্যক্তি অনুষ্ঠানের আয়োজকদের মধ্যে কেউ হবেন। কিন্তু নিমেষেই সেই ভুল ধারণা ভেঙে যায়।
তাদের ভাষ্য মতে, হামলাকারী যুবক ৭৫ বছর বয়সী লেখকের ওপরে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। ছুরি দিয়ে একের পর এক কোপ বসান তার ঘাড়ে, গলায় ও পেটে। ওই সময় মঞ্চে উপস্থিত আয়োজকরাই হামলাকারীকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলেন। পরে টেনে হিঁচড়ে তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন সালমান রুশদি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই রুশদির শরীরে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি কোপ মারা হয়। একাংশের দাবি, লেখককে আহত করার লক্ষ্যে নয়, খুন করার জন্যই ওই রকম নৃশংসভাবে কোপানো হয়েছে। হামলাকারী যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো কোনোদিকে না তাকিয়ে ক্রমাগত ছুরির কোপ বসাচ্ছিলেন রুশদির শরীরে।
এই ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহ ছাড়তে বলা হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ রুশদিকে হেলিকপ্টারে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। গ্রেপ্তার করা হয় হামলাকারীকেও। তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটের মঞ্চে সালমান রুশদির ভাষণ শুরুর আগমুহূর্তে তার ওপর হামলা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে তখন উপস্থিত ছিলেন প্রায় আড়াই হাজার দর্শক। হামলার সময় তাৎক্ষণিকভাবে অনেকে ঠিক কী ঘটছে, তা বুঝতে পারছিলেন না। সালমান রুশদি মেঝেতে গড়িয়ে পড়ার পর দর্শকদের কেউ কেউ তার কাছে ছুটে গেছেন।
ঘটনার সময় দর্শকসারিতে ছিলেন রাব্বি চার্লস সাভেনর নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি (হামলাকারী) দৌড়ে মঞ্চে উঠে যান এবং রুশদিকে আঘাত করতে শুরু করেন।’
একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাভেনর বলেন, ‘প্রথমে ভাবছিলাম কী চলছে? এরপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরোপুরি স্পষ্ট হয় যে তাকে পেটানো হচ্ছে।’ সাভেনরের মতে, প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে হামলা চলেছে।
ঘটনার সময় দর্শকসারিতে ছিলেন কাথলিন জোন্স। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবছিলাম এটি হয়তো অভিনয়। এ লেখককে ঘিরে যে এখনো অনেক বিতর্ক আছে, সেটাই হয়তো দেখানোর চেষ্টা চলছে। তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রমাণিত হয়, যা ভাবছি তা ঠিক নয়।’ তিনি আরও বলেন, হামলাকারী কালো রঙের পোশাক পরা ছিলেন। তার মুখে কালো মুখোশ ছিল।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সালমান রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’ নামক বইয়ের জন্য বুকার পুরস্কার জেতেন তিনি। তবে ১৯৮৮ সালে তার চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য তাকে ৯ বছর লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। যুক্তরাজ্যে বসবাসকালে বেশিরভাগ সময় তাকে সরকারের সুরক্ষা নিয়ে থাকতে হয়েছে।
‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। এটি প্রকাশের পর থেকে সালমান রুশদি হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন। বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে সালমান রুশদিকে নাইট উপাধি দেন ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।