যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ছুরি হামলার শিকার ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদিকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা তেমন একটা ভালো নয় এবং তিনি কথা বলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন লেখকের একজন কর্মকর্তা। আজ শনিবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
অ্যান্ড্রু ওয়াইলি নামে রুশদির ওই কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর রচয়িতা ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি একটি চোখ হারাতে পারেন।
বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার নিউইয়র্কের শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানমঞ্চে কথা বলার সময় ছুরি হামলার শিকার হন সালমান রুশদি। এ সময় তার ঘাড়ে এক হামলাকারী ছুরিকাঘাত করেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রুশদির গলায় ও পেটে অন্তত একটি করে আঘাত রয়েছে। হামলার পর তাকে হেলিকপ্টারে পেনসিলভানিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঞ্চে যিনি সালমান রুশদির সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন তিনিও সামান্য আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার পর অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যরা ছুটে গিয়ে হামলাকারীকে ধরে ফেলে, পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লিন্ডা আব্রাম নামে একজন জানিয়েছেন, হামলাকারীকে ধরে ফেলার পরও তিনি আরও হামলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। পাঁচজন মিলে ধরে তাকে টেনে নিয়ে আসা হচ্ছিল, তখনো তিনি কুপিয়ে যাচ্ছিলেন।
বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ হাদি মাতার (২৪) নামের একজনকে আটক করেছে। পুলিশ বলছে, হামলাকারী মঞ্চে উঠে রুশদি ও তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ওপর হামলা চালান। রুশদির ঘাড়ে ছুরি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করা হয়েছে। পরে হামলাকারীকে ধরে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
তবে কেন বা কী উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ এখনো কিছু জানায়নি। অনুষ্ঠানস্থলে পাওয়া একটি ব্যাকপ্যাক ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষা করবে পুলিশ।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ৭৫ বছর বয়সী লেখক রুশদি ১৯৮১ সালে তার লেখা বই ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তার চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য তাকে ৯ বছর লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল।
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। এটি প্রকাশের পর থেকে রুশদি হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন।
বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেইসঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন। সে সময় ওই হুমকি প্রত্যাখ্যান করে রুশদি বলেছিলেন, ‘মানুষের পুরস্কারের প্রতি আগ্রহী হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই।’
রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ দেশটির রাজনীতিবিদেরা নিন্দা জানিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।