বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় অনেক বেশি পানির চাপ বেড়েছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কারণে আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।
স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় অতিরিক্ত পানির চাপে ও তীব্র স্রোতের তোড়ে শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চলের কৈখালী, গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া ও হরিষখালী এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুরের জোয়ারে কপোতাক্ষ নদের পানি কুড়িকাউনিয়া ও খোলপেটুয়া নদীর পানি হরিষখালী পয়েন্ট দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এ সময় নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারি জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হওয়া এ অঞ্চলের মানুষ বহু কষ্টে ঘুরে দাঁড়ানোর পর আবারো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত লবণপানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। এখনই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে মানুষের স্বপ্ন তছনছ হয়ে যাবে।
শ্যামনগর উপজেলার বদ্বীপ গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে তার ইউনিয়নের দুই পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খোলপেটুয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় জোয়ারের তীব্রতা অনেক বেশি হয়েছে। ফলে গাবুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর সোরা, লেবুবুনিয়া, নাপিতখালী গ্রামসহ বেশ কিছু এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। প্রতিবার জোয়ারের সময় এভাবে বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকতে থাকলে মাটি ক্ষয়ে বাঁধ ধসে পড়বে। এতে করে নদ-নদীর তীরবর্তী মানুষেরা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন।
কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম বলেন, সীমান্তের কালিন্দী নদীর পানি কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প ও ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন বেড়ীবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এছাড়াও পূর্ব কৈখালী আশ্রয়ন প্রকল্প সংলগ্ন স্লুইসগেটের দুই পাশ দিয়ে, নিদয়া, কাঠামারী, নৈকাটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করছে। কিছু কিছু জায়গায় এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগে সেগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছে।
পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ঝাঁপা, পাখিমারা, কামালকাটি, চণ্ডিপুর, চাউলখোলা, বন্যতলা এলাকার কিছু অংশের বেড়িবাঁধের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে সেগুলো মেরামত করেছি।
আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, সিডর, আইলা, বুলবুল, ইয়াস ও আম্ফানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতাপনগরের মানুষ। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এই ইউনিয়নের অর্ধেক অংশ প্রায় ৬ মাস ধরে পানিবন্দি। এ অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে এখানকার বাসিন্দারা। সর্বশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সেই ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই ইউনিয়নের মানুষ।
সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কপোতাক্ষ নদের তীব্র জোয়ারের তোড়ে ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কুড়িকাউনিয়ার পাশাপাশি রোববার দুপুরে হরিষখালী এলাকায়ও পাউবো’র বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই দুটি পয়েন্ট দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকছে। ফলে প্রতাপনগরের মানুষ ফের প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে। এখনি ব্যবস্থা না নিলে আবারো ডুববে প্রতাপনগর ইউনিয়ন।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, তার বিভাগের অধীনে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সাতক্ষীরার জেলার কয়েকটি পোল্ডারে প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব বাঁধ সংস্কার কাজ করে যাচ্ছি। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢোকার মত ঘটনা ঘটেছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁধের ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে।