মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন

বিদায় আধুনিক ব্রিটেনের রূপকার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৯৯ বার

‘সময়ের হাত’ মুছে দিয়েছে সবকিছু, জীবনানন্দ দাশ যেমনটা বলে চলে গেছেন, ‘নক্ষত্রেরও আয়ু শেষ’ হয়ে গেল। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। কিন্তু ‘উজ্জ্বল আলোর দিন নিভে’ গেলেও ‘চিরদিন’ তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের ‘স্বপ্নের জগৎ’জুড়ে। যেমন, ব্রিটিশ গবেষক ড. লরা ক্লেনসি গতরাতে মৃত্যুসংবাদ শোনার পর ইমেইলে এই লেখককে বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক, যাকে তারা মনে রাখবে, বহু বহুদিন।’ তবে, ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ সন ল্যাং গতরাতে ইমেইলে এ লেখককে বলেছেন, ‘সম্ভবত, এই সুযোগে কমনওয়েলথ দেশগুলো ব্রিটিশ রাজশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের পাঠ চুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে।’

বাকিংহাম প্যালেস এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানায়, বালমোরালে ‘শান্তিতে’ রানি মারা গেছেন। রাজ-রীতি অনুসারে, রানির মৃত্যুর পর তার বড় চেলে চার্লস নতুন রাজা হিসেবে সিংহাসনে আসীন হয়েছেন, তিনি যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথভুক্ত ১৪ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। বিশ্বনেতারা রানির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

 

advertisement

৯৬ বছরের জীবনে ৭০ বছরই রাজশাসন করেছেন রানি। এ সময়ে তিনি ১২ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট অদলবদল হতে দেখেছেন। নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীকে, এমনকি এই সপ্তাহেই লিজ ট্রাসকে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধামমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন তিনি।
নতুন রাজা চার্লস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমার প্রাণপ্রিয় মা, রানির মৃত্যু আমার জন্য, আমার পুরো পরিবারের জন্য গভীর বেদনার মুহূর্ত। আমি জানি, তার এই শূন্যস্থান দেশজুড়েই অনুভূত হবে, এই শূন্যতা অনুভব করবে কমনওয়েলথ আর পৃথিবীর অগণিত মানুষ।’

কেমন হবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দৃশ্যপট

রানির মৃত্যুতে কি যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাবে? প্রশ্ন রেখেছিলাম যুক্তরাজ্যের দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছে। এদের একজন গণমাধ্যম গবেষক এবং অপরজন ইতিহাসবিদ।

যুক্তরাজ্যের ল্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির গণমাধ্যম গবেষক ড. লরা ক্লেনসি। ছবি : ল্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটি

 

ল্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. লরা ক্লেনসি গতরাতে ইমেইল আলাপে এই লেখককে বলেন, ‘রানির মৃত্যু যুক্তরাজ্যের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যাকে তারা মনে রাখবে। ব্রিটিশ রাজনীতিতে এরই মধ্যেই অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। রানির মৃত্যু যে আরও অস্থিতিশীলতার কারণ হবে, তা অনুমান করা যায়। রানি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। বিশ্ব দরবারে তিনি ব্রিটেনের প্রতীক। সে জন্য এই মৃত্যু বিশ্বের সব প্রান্তের স্থিতাবস্থাকে ব্যাহত করবে, নিঃসন্দেহে।’

অ্যাংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ ড. সন ল্যাং গতরাতে ইমেইলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই লেখককে বলেন, ‘রানির মৃত্যু অবশ্যই ব্রিটেনের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন করবে। রানির রাজতন্ত্র দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর স্তরের ঊর্ধ্বে ছিল। ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা ছিল রানির শাসনামলে। এমন সফলতার জন্য প্রকৃত দক্ষতা এবং সাংবিধানিক প্রবৃত্তি লাগে, যা রানির ছিল। সিংহাসনে দীর্ঘকাল থাকা রানির আমলে অনেক সাফল্যই এসেছে। এখন যেহেতু তিনি আর নেই, মারা গেছেন, অনিবার্যভাবে রাজতন্ত্রের বড় পুনর্গঠন হয়তো দেখতে পাব আমরা। তবে সম্ভবত, এই সুযোগে কমনওয়েলথ দেশগুলো ব্রিটিশ রাজশাসনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের পাঠ চুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে।’

যুক্তরাজ্যের অ্যাংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ ড. সন ল্যাং। ছবি : ইউটিউব

 

কেমন ছিল রানির রাজশাসন

সিংহাসনে রানির ৭০ বছরের নেতৃত্বকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে বিশ্ব? এই প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যম ও সমাজ উন্নয়ন গবেষক ড. লরা ক্লেনসি এই লেখককে বলেছেন, ‘উল্লেখযোগ্য আর্থ-রাজনৈতিক পালাবাদলের কালে রাজশাসন করেছেন রানি। এই সময় গণমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রযুক্তি- সমাজের সব ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন হয়েছে। এমন পালাবদল আর কি হবে? সম্ভবত এক রাজত্বে এত পরিবর্তন কখনো দেখতে পাব না। সমাজের পালাবাদলের সঙ্গে রাজতন্ত্র কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তা ভাবলেই বিস্মিত হই। রাজতন্ত্র এই বদলগুলো মেনে নিয়েছে, মানিয়ে নিয়েছে। যেমন সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট ছিল রানির।’

অন্যদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসবিদ সন ল্যাং এই লেখককে বলেছেন, ‘বিচার ও বিবেচনায় তার অবস্থান ছিল অতুলনীয়। তিনি সংবিধানের সীমার মধ্যেই থাকতে চেয়েছিলেন, ছিলেনও, কখনো সে সীমা অতিক্রম করেননি। প্রচারপর্দার অন্তরালে থেকে সর্বদা দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছেন। প্রিন্সেস ডায়ানা মারা যাওয়ার সময় রানি একটি ভুল পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেটিই বিরল ব্যতিক্রম। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও তিনি যথাদ্রুত সংযমী হয়েছিলেন। তিনি ব্রিটিশ জনগণের সঙ্গে দৃঢ়তর ব্যক্তিগত বন্ধন তৈরি করেছিলেন, খুব কম রাজনীতিবিদই মানুষের সঙ্গে এমন আপন সম্পর্ক গড়তে পারেন।’

সবচেয়ে বেশি সময় সিংহাসনে

১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনে জন্ম হয় রানির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাত বছর পর ১৯৫২ সালে তিনি সিংহাসনে আসীন হন। তিনি ব্রিটিশ রাজশাসনে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাজত্ব করা রাষ্ট্রনায়ক। তার শাসনামলে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন উইনস্টন চার্চিল, যার জন্ম ১৮৭৪ সালে। এর ১০১ বছর পর জন্মগ্রহণ করা লিজ ট্রাস এ সপ্তাহে হয়েছেন রানির শাসনামলের ১৫তম ও শেষ প্রধানমন্ত্রী। রানির মৃত্যুতে ট্রাস বলেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন ‘সেই পাথর, যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল আধুনকি ব্রিটেন।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com