বিশ্বমানবতার সামগ্রিক কল্যাণে রবিউল আউয়াল মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা শান্তির বাণীবাহক ও দূতরূপে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। মহানবী সা: পরিবার, সমাজ ও দেশের সর্বস্তরে শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি পুরুষের অধিকারের পাশাপাশি নারীর অধিকারের বিষয়টিও সুস্পষ্ট করেছেন। আধুনিক বিশ্বে নারী অধিকারের বিষয়টি বহুল আলোচিত। পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারী অধিকারের ধারণাটি গত শতাব্দীর সৃষ্টি। কিন্তু ইসলাম নারী অধিকারের ধারণা উপস্থাপন করেছে আজ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ বছর আগে।
ইসলাম নারী অধিকারের সুস্পষ্ট ঘোষণায় নারীর যথাযথ মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ সা: সর্বপ্রথম নারী জাতির পূর্ণ মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসলামের আগে জাহেলি আরব সমাজে নারীর মর্যাদাপূর্ণ কোনো অবস্থান ছিল না। তাদের গণ্য করা হতো ভোগের বস্তু হিসেবে। নারী ছিল রাতের কবিতার আসর আর মদের আড্ডার বিশেষ অনুষঙ্গ। জীবন ও সমাজে তাদের বড় জোর স্বামী বা মনিবের মনোরঞ্জনের উপকরণের বেশি কিছু মনে করা হতো না। নারীকে পরিবার, সমাজ ও বংশের জন্য অসম্মান ও অভিশাপ মনে করা হতো। এমনকি সামাজিক লজ্জার ভয়ে নারীকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। পবিত্র কুরআনে পুরুষদের সাথে নারীদেরও সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে মায়েদের, স্ত্রীদের, কন্যাদের, স্বামীদের সম্পত্তির এবং বিশেষ অবস্থায় বোনদের-ভাইদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিধবাদের সাহায্যকারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা বিধবা নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী (মুসলিম-১৯৩৮)। একবার ওয়াইস করনি রা: নবীজীর কাছে খবর পাঠালেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আপনার সাথে আমার দেখা করার খুব ইচ্ছা, কিন্তু আমার মা খুব অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি? নবীজী সা: উত্তর পাঠালেন, আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাথে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের সেবা করা বেশি জরুরি। মায়ের সেবা করার কারণে তিনি প্রিয় নবীর যুগে থেকেও তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করতে পারেননি। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান আছে যাদের সে লালন পালন করে ও তাদের সাথে সদয় আচরণ করে, তার জন্য অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দু’টি মেয়ে থাকে? নবীজী বললেন, ‘দু’টি থাকলেও’ (বুখারি-২৪৮১)।
মহানবী সা:-এর ইন্তেকালের আগে সমবেত মুসলমানদের যেসব ওসিয়ত করেছিলেন, তার মধ্যে একটি উপদেশ ছিল, আমি তোমাদের আমার এই শেষ ওসিয়ত করছি যে, নারীর সাথে যেন সর্বদা উত্তম আচরণ করা হয় (মুসলিম-১৮৪১)। স্ত্রীর প্রতি সদাচরণের ইঙ্গিত দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের (নারীর) সাথে উত্তম আচরণ করো এবং উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও’ (সূরা নিসা-১৯) নবীজী বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’ (তিরমিজি-২৪২৭)।
বাংলাদেশে প্রতিদিনই নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি বৈষম্যভাব বেড়েই চলছে। নারীকে হত্যা, ধর্ষণসহ নানারকম নির্যাতনের নির্মম ঘটনা প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের সমাজের কোথাও নারী নিরাপদ নয়। পরিস্থিতি এমন যে, আমরা যেন আইয়ামে জাহেলিয়াতের চেয়েও আরো কঠিন সময়ে বসবাস করছি! নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও নারী অধিকার নিশ্চিত করতে মহানবী সা:-এর নির্দেশিত নারী নীতিমালা অনুসরণ করা আবশ্যক।
লেখক : প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার