আগামী ২৯ অক্টোবর শনিবার রংপুরে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। সমাবেশের জন্য জিলা স্কুল মাঠ চেয়ে আবেদন করলেও মহানগর পুলিশ অনুমতি দিয়েছে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের। মাঠে মঞ্চ বানানোর কাজও ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। অনেক মানুষও আসতে শুরু করেছে। আগাম আসা এসব মানুষ নগরীর আবাসিক হোটেল, ছাত্রবাস, স্বজন, পরিজন ছাড়াও নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলার আত্মীয় স্বজনদেও বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারের মধ্যেই সমাবেশের ৩০ ভাগ লোক রংপুরে প্রবেশ করবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক এবং বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপ-মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা সমাবেশের জন্য রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জন্য আবেদন করেছিলাম প্রায় সোয়া মাস আগে। সে অনুযায়ী আমরা পোস্টারিংসহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু অন্তিম মুহূর্তে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আমাদের গণসমাবেশের জন্য কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে মৌখিক অনমুতি নিশ্চিত করেছে। আমরা প্রশাসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে মঞ্চ তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতির কাজ চালাচ্ছি। এর আগে আমরা এক মাস ধরে রংপুর বিভাগের একটি সিটি করপোরেশন, আট জেলা, ৫৮টি উপজেলা ৩ টি পৌরসভা এবং ৫৩২টি ইউনিয়নে সম্মেলন সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছি।
সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির এই সমন্বয়ক আরো বলেন, একটি পরিচ্ছন্ন এবং রেকর্ডভাঙা উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এর আগে অন্তত রংপুরের কোন সমাবেশে এক লোক হয় নি এতো লোক উপস্থিতির টার্গেট আমাদের। আমরা নিশ্চিত করেছি, শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, তৃণমূল, নগর, শহর এবং বন্দরের সাধারণ মানুষরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিবেন। সমাশে স্থল ছাপিয়ে মানুষের স্রোতে রংপুর মহানগরীর প্রধান সড়ক, বিভিন্ন মাঠসহ অলিগলিতে ভরে যাবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
দুলু বলেন, জেলা স্কুল মাঠে অনুমতি না দেয়ার মাধ্যমে সরকার এবং প্রশাসন বার্তা দিয়েছে, তারা আমাদের গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছেন। হয়তো সেদিন পরিবহন বন্ধ করে দিয়ে সরকার ধর্মঘট পালন করবেন। কিন্তু মানুষের স্রোতে ঠেকাতে পারবে না সরকার। সকল ধরণের বাধা অতিক্রম করে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ গণসমাবেশে উপস্থিত হবেন। আমরা শান্তিপূর্ন সমাবেশ করতে চাই, কিন্তু সরকার যদি বাধা দেয় তাহলে সেই বাধা প্রতিহত করা হবে।
গণসমাবেশের সভাপতি রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু নয়া দিগন্তকে জানান, কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের মিনারের সামনেই কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ প্রস্থ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। মাঠের পাশে কয়েকটি গেটও করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রশাসন জিলা স্কুল মাঠের অনুমোদন দেয়নি ভয়ে। তবে সেটি দিলেই পরিস্থিতি ভালো থাকতো। পুলিশ চীনের প্রাচীর দিলেও মানুষের স্রোতে আটকাতে পারবে না। ইতোমধ্যেই সমাবেশ স্থলের লোকজন বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারের মধ্যেই সমাবেশের প্রায় ৩০ ভাগ লোক নগরী এবং আশেপাশে বিভিন্নভাবে এসে পৌছবেন।
এদিকে বুধবারই সকাল থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসা শুরু করেছে রংপুরে। অনেকেই বিভিন্ন হোটেলে উঠেছেন। আগাম আসারা বেশিরভাগই উঠছেন আত্মীয়, স্বজন, পরিচিতজনদের বাসাবাড়ি, ছাত্রাবাসসহ আবাসিকে। বুধবার রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন খাবার হোটেলের মধ্যে দেখা গেছে বাইরের মানুষজন খাওয়া দাওয়া করছেন এবং গণসমাবেশ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। সন্ধায় নগরীর পায়রা চত্বর এলাকার একটি হোটেলে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় এ ধরণের অন্তত ১০ জন বিভিন্ন বয়সী মানুষের সাথে। এদের মধ্যে চারজন কুড়িগ্রামের রৌমারির, তিনজন পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া, একজন ঠাকুরগাওয়ের রানীশংকৈল এবং দুজন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বাসিন্দা। তাদের দুজন আবাসিক হোটেল, তিনজন আত্মীয় বাড়ি এবং পাঁচজন বিভিন্ন ছাত্রাবাসে উঠেছেন। আগাম আসার ব্যাপারে তারা সবাই মোটামুটি একই ধরণের কথা বলেছেন। তাদের দাবি, যদি গাড়ি ঘোড়া বন্ধ থাকে, পথে বাধা দেয়া হয়, মারামারি হয়। তাহলে তো আসতে পারবো না। এজন্য আগেই আসা।
শুধু নগরী নয়, আশেপাশের উপজেলাগুলোতেও আগাম আসা শুরু করেছেন অনেকেই। উঠেছেন আত্মীয়র বাড়ি। যাতে হেটে হলেও সমাবেশ স্থলে আসা যায়। টার্মিনাল এলাকায় কথা হয় দুজন মধ্যবয়সী যুবকের সাথে। তারা জানালেন, বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে এসেছেন। উঠেছেন বদরগঞ্জের গোপালপুরের শ্যামপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে। বিকেলে রংপুর শহর ঘুরে দেখার জন্য আসছিলেন তারা।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা বিপিএম (বার) পিপিএম জানান, বিএনপির আবেদনের প্রেক্ষিতে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের অনুমতি দেয়া হয়েছে। জিলা স্কুল মাঠ না দেয়ার ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে চাননি। সম্মেলন উপলক্ষে বিএনপির বাধা দেয়ার অভিযোগটিও সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।