অবিশ্বাস্য, অলৌকিক, অকল্পনীয়ভাবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো দক্ষিণ আফ্রিকার। বিশ্বকাপ শুরুর আগে যে দলকে ফাইনালে দেখছিল অনেকে, তারাই আটকে গেল সুপার টুয়েলভে। বলা যায়, তাদের আটকে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ডু অর ডাই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৩ রানে হারিয়ে দিয়েছে ডাচরা! ফলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচেই নির্ধারণ হবে কে যাবে সেমিফাইনালে।
এই জয়ে শুধু বাংলাদেশ-পাকিস্তানই লাভবান হয়নি, লাভবান হয়েছে ডাচরাও। বিশ্বকাপের মূল পর্বে প্রথম জয়ের দেখা পেল নেদারল্যান্ডস, তেমনি এই জয় আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি মূল পর্ব খেলতে বড় ভূমিকা রাখবে ডাচদের পক্ষ হয়ে।
এইদিন জিতলে সেমিফাইনাল, হারলে নিশ্চিত বিদায়; এমন সমীকরণ হাতে রেখে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাঠে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। অ্যাডিলেড ওভালে টসে জিতে আগে বল হাতে তোলে নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
আগে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরু ডাচদের। ৮.৩ ওভারে দলীয় ৫৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। স্টিফেন মাইবার্গ ফিরেন ৩০ বল থেকে ৩৭ রানে। ডাচরা দ্বিতীয় উইকেট হারায় মার্ক ও’ডাউড ১৩তম ওভারে ৩১ বলে ২৯ রানে ফিরে গেলে। দলীয় রান তখন ৯৭। মূলত স্টিফেন ফেরার পর ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে এসে রানের গতি বাড়াতে মন দেন টম কুপার।
১৫তম ওভারে টম কুপার কেশব মহারাজের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন। এর আগে তিনি খেলেন ১৯ বলে ৩৫ রানের এক ঝড়ো ইনিংস। টপ অর্ডারের দৃঢ়তায় ভালো শুরু পাওয়ায় শেষ সুন্দর করার দায়িত্ব আসে মিড অর্ডারের কাঁধে। তবে বাস ডি লিডি সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, ফিরেন ৭ বল থেকে ১ রানে। সেখানেই বড় রানের লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে পড়ে ডাচরা।
তবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন কলিন অ্যাকারম্যান ও স্কট এডওয়ার্ড। তাদের দু’জনের ১৭ বলে ৩৫ রানের জুটিতে ৪ উইকেটে ১৫৮ রানের সংগ্রহ পায় নেদারল্যান্ডস। কলিন অ্যাকারম্যান খেলেন হার না মানা ২৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস, ৭ বলে ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন স্কট এডওয়ার্ড।
১৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ডাচ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে উড়ন্ত সূচনার দেখা পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় ওভারে কুইন্টন ডি কককে নিজের শিকার বানান ফ্রেড ক্লাসেন। ১৩ বল থেকে ১৩ রানে ফিরে যান এই ওপেনার। আরেক ওপেনার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ফিরেন পাওয়ার প্লের শেষ বলে। তার ব্যাটে আসে ২০ বলে ২০ রান।
ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি রাইলি রুশো। দশম ওভারে ব্রেন্ডন গ্লোভারের শিকার হয়ে তিনি। ফিরেন ২১ বলে ২৫ রানে। ইনিংস বড় করতে পারেনি এইডেন মার্করামও, ফ্রেড ক্লাসেনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে তিনি ফিরেন ১৩ বল থেকে ১৭ রানে। এর মাঝেই ফিরে যেতে পারতেন ডেভিড মিলারও, তবে ক্যাচ হাত ফসকায় জীবন পান তিনি।
তবে বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারেননি মিলার, ১৬তম ওভারে গ্লোভারের দ্বিতীয় শিকার তিনি। ফিরেন ১৭ বল থেকে ১৭ রান করে। দুই বল পর ০ রান করে গ্লোভারের তৃতীয় শিকারে পরিনত হন ওয়েইন পার্নেল। শেষ ২৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন তখন ৪৫ রান। হাতে ৪ উইকেট। যদিও ভরসার প্রদীপ হয়ে তখনও জ্বলছেন হেনরিখ ক্লাসেন।
১৮তম ওভারে সেই ক্লাসেনকে ফিরিয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় নেদারল্যান্ডস। বাস ডি লিডের শিকার হয়ে ক্লাসেন ফিরেন ২১ রানে। এদিকে শেষ ২ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৬ রান, হাতে ৩ উইকেট। ১৯তম ওভারে ১০ রান এলে শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ২৬ রানে। তবে শেষ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২ রান সংগ্রহ করতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে ১৩ রানে জয় নিশ্চিত হয় নেদারল্যান্ডসের।