(প্রথম অংশ)
আল্লাহ তায়ালা বিশ^বাসীকে দুই প্রকার উপাধিতে ভূষিত করেছেন। একটি ইতিবাচক অপরটি নেতিবাচক। ইতিবাচক উপাধিতে যারা ভূষিত হয়েছেন, তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মহান ও মহা সফল অর্থাৎ চিরস্থায়ী জীবনে জান্নাতবাসী। পক্ষান্তরে, যারা নেতিবাচক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন, তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে নির্বোধ, অভিশপ্ত, পথভ্রষ্ট ইত্যাদি। ফলে তারা মহা-ব্যর্থ ও পরিণামে চিরস্থায়ী জীবনে জাহান্নামি এবং তাদেরকে অবর্ণনীয় কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে চিরকালের জন্য।
ইতিবাচক উপাধিগুলো হলো- মুত্তাকি, মুমিন, মুসলিম, শ্রেষ্ঠ জাতি, আল্লাহর পছন্দনীয় ও বন্ধু, সৎকর্মশীল ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, নেতিবাচক উপাধিগুলো হলো- কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, অহঙ্কারী বা দাম্ভিক, শয়তান, অরাজকতা সৃষ্টিকারী, আল্লাহর অপছন্দনীয়, পশুসম বরং পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট ও পথভ্রষ্ট, অভিশপ্ত ইত্যাদি।
ক্রোধান্বিত পিতা-মাতা অবাধ্য সন্তানকে শুধু গাল-মন্দ করেই ক্ষান্ত হন না; বরং চরম পরম অভিশাপ দিতে থাকেন। অনুরূপভাবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা অবাধ্য মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের সাথে সাথে ধীকৃত উপাধি দিয়ে তাদের উপরে আজাব গজব পাঠান, এমনকি তাদের অনেককে ধ্বংস করে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। উদাহরণস্বরূপ- ফেরাউন ও তার সমস্ত সেনাবাহিনী, নমরুদ ও তার সৈন্যবাহিনী, কারুন, আবরাহা বাদশাহ ও তার সৈন্যবাহিনী, আবু জেহেল, আবু লাহাব, কাওমে আদ, কাওমে সামুদ, কাওমে লুত, কাওমে নূহ ইত্যাদি, যা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। বর্তমানে বিশ^ব্যাপী যে ‘করোনাভাইরাসের’ আক্রমণ চলছে, তা আমাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে আল্লাহর মাত্রাতিরিক্ত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ও প্রমাণ। আজ বিশ^বাসী কত অসহায়, কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত। বলতে গেলে প্রত্যেকটি মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত ও শঙ্কিত অবস্থায় এবং দুঃখ-কষ্টে জীবন যাপন করছে। এক কথায়, অভূতপূর্ব অশান্ত পৃথিবী ও অশান্তিতে বিশ^বাসী।
পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসূলকে পাঠিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গোত্র ও বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য; কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম হলো হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ক্ষেত্রে। তিনি প্রেরিত হয়েছেন কোনো গোত্র বা অঞ্চলবিশেষের জন্য নয়; বরং সারা বিশ^ ও বিশ^বাসীর জন্য। তিনি সর্বশেষ রাসূল ও নবী। আল্লাহর ঘোষণা, ‘মুহাম্মদ রাসূল সা: কোনো পুরুষের পিতা ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী’ (সূরা আল আহজাব-৪০)। ফলে আর কোনো রাসূল বা নবী পৃথিবীতে আসবেন না। যদি কেউ নবী বা রাসূল বলে দাবি করেন, তাহলে সে হবে ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী এবং তার প্ররোচনায় যে বা যারা তাকে নবী বা রাসূল বলে বিশ^াস করবেন তারা হবে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।
রাসূল সা:-কে আল্লাহ তায়ালা বিশ^শান্তির দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন। প্রমাণ, আল্লাহর বাণী- ‘হে নবী! আমি আপনাকে বিশ^বাসীর জন্য রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি’ (সূরা আল আম্বিয়া-১০৭)। তা ছাড়া তাকে প্রেরণ করা হয়েছে বিশ^শিক্ষক হিসেবে। তিনি বিশে^র সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ জ্ঞানী মানুষ।
ডক্টর মাইকেল এইচ হার্ট, আমেরিকার মিশিগান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, তিনি তার নির্বাচনী সুদক্ষ পরিষদসহ অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুদীর্ঘ সময় ব্যয় করে বিশে^র শতজন শ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী মানুষের তালিকা প্রস্তুত করেন। এ তালিকায় আমাদের প্রিয়তম নবী ও রাসূল সা:-কে যথার্থই প্রথম স্থানে ও ওমর রা:-কে ৫২তম স্থানে রেখেছেন। সত্যিকার অর্থে রাসূল সা: আল্লাহর প্রিয়তম মানুষ, যার উপাধি ‘হাবিবুল্লাহ’ এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইবরাহিম আ:, যার উপাধি ‘খলিলুল্লাহ’। রাসূল সা:-কে আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন ‘হাওজে কাওসার’ যা উল্লেখ আছে সূরায়ে কাউসারে (সূরা-১০৮, আয়াত-১) হাওজে কাউসারের এক গ্লাস শরবত পান করার যার সৌভাগ্য হবে, জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত তার আর কোনো পিপাসা বোধ হবে না। কতই না পরম সৌভাগ্য! তা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়তম রাসূলকে পরকালে স্থান দেবেন ‘মাকামে মাহমুদে’ যার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন- ‘হে রাসূল! আদায় করুন সালাতে তাহাজ্জুদ, যা আপনার জন্য অতিরিক্ত বা নফল সালাত। অচিরেই প্রতিদান হিসেবে আপনার প্রতিপালক আপনাকে অধিষ্ঠিত করবেন ‘মাকামে মাহামুদে’ যা জান্নাতের শীর্ষস্থানীয় মর্যাদাপূর্ণ স্থান’ (সূরা বনি ইসরাইল-৭৯)।
আমাদের রাসূল সা: হবেন একমাত্র সুপারিশকারী আমাদের জন্য পরকালের সব নবী-রাসূলদের মধ্যে। কুরআনে ‘মুহাম্মাদ’ নামে একটি সূরা আছে। তা ছাড়া অসংখ্য অগণিত আয়াতে বিদ্যমান আছে সরাসরি রাসূল সা:-কে নিয়ে। উদাহরণস্বরূপ- সূরা আদ দুহা (সূরা নম্বর-৯৩)। তা ছাড়া লক্ষ্যণীয়, সূরায়ে ‘মুহাম্মাদ’ নামে একটি সূরা কুরআনে আল্লাহ স্থান দিয়েছেন (সূরা নম্বর-৪৭)। কুরআনে আয়াতের একটি ছোট অংশ বিরাজমান- ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি’। আল্লাহর কাছে আমাদের অগণিত শুকরিয়া, কারণ আমরা সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের উম্মত। রাসূল সা: আল্লাহর তরফ থেকে বিশ^বাসীর জন্য অতুলনীয় নিয়ামত।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ ও চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস