অবৈধভাবে আসা বা চোরাচালানের সময় জব্দ করা সোনা নিলামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক লটে ২৫ হাজার ৩১২ গ্রাম (২৫.৩১ কেজি) বা ২ হাজার ১৭০ ভরি সোনা বিক্রি করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের এক নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছে। চলতি মাসেই সোনা বিক্রির প্রক্রিয়াটি শুরু হবে। তবে যে কেউ চাইলেই নিলামের সোনা কিনতে পারবেন না। শুধুমাত্র এ খাতের লাইসেন্স পাওয়া ব্যবসায়ীরা নিলামে অংশ নিয়ে সোনা কিনতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট জানায়, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ বা চোরাচালানের সোনা জব্দ করে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জব্দ করা সোনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকে। মামলার রায় সরকারের পক্ষে হলে জব্দ সোনা নিলামে বিক্রি করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী নিলামে অংশ নিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স; টিআইএন সনদ; মূসক নিবন্ধন; বিআইএন সনদ; সোনা ক্রয়, মজুত ও সরবরাহের লাইসেন্স; সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যপদ; আর্থিক সচ্ছলতার বিষয়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সনদ; আয়কর পরিশোধের হালনাগাদ সনদ; আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি হলে কোম্পানির নিবন্ধন সনদ; মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন ও পরিচালকদের হালনাগাদ তালিকা জমা দিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্থায়ী খাতে প্রায় দু’হাজার ৯০০ কেজি আর স্থায়ী খাতে রয়েছে ১৫৯ কেজি সোনা। এখন স্থায়ী খাত থেকে ২৫ কেজি সোনা বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আগামী ১৪ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত আগ্রহী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে দু’হাজার টাকা জমা (অফেরতযোগ্য) দিয়ে দরপত্র শিডিউল ক্রয় করতে পারবেন। এ সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। পরে সংস্থাটির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে নিলামে অংশ নেয়ার জন্য যোগ্যদের একটি তালিকা করবে। এপর্যায়ে যেসব সোনার বার, অলঙ্কার, টুকরা বা পাত বিক্রি করা হবে, তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে সোনা কতটুকু খাঁটি, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন নিলামে অংশ নেয়ার জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে একজন স্বর্ণকার বা পরীক্ষক যেতে পারবেন। এই প্রদর্শনের তৃতীয় কর্ম দিবসে দরপত্র জমা দিতে হবে। সাথে দরপত্রে উদ্ধৃত মূল্যের আড়াই শতাংশ অর্থ বায়না বা নিরাপত্তা জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে সোনা ক্রয়ের কার্যাদেশ দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সব অর্থ জমা দিতে হবে। অর্থ পরিশোধ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সোনা নিতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংক দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জামানত বাজেয়াপ্ত ও প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবে।
দেশের বাজারে সবশেষ ২৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া সোনার দাম অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার মূল্য ৮০ হাজার ১৩২ টাকা। ২১ ক্যারেটের সোনা ৭৬ হাজার ৫১৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ৬৫ হাজার ৫৫২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ৫৪ হাজার ৩৫৪ টাকা।
সুনির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও দেশে বছরে প্রায় ২০ থেকে ৪০ টন সোনার চাহিদা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তার মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পুরোনো অলঙ্কার দিয়ে মেটানো হয়। তাই বৈধভাবে সোনার চাহিদা মেটাতে ও ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফেরাতে ২০১৮ সালে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত সাড়ে চার থেকে ৫০০ কেজি সোনা আমদানি হয়েছে। ফলে এখনো চাহিদা পূরণ হচ্ছে অবৈধভাবে আসা সোনা দিয়ে।