আফ্রিকাজুড়ে চরমপন্থী সহিংসতা বাড়তে থাকা সত্ত্বেও মহাদেশটিতে মোতায়েন সেনা কমানোর চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে দেশটির মিত্র দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছে যারা অশান্তিপূর্ণ সাহেল অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইকে জোরদার করতে কাজ করছেন।
সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে বিস্তীর্ণ শুষ্ক অঞ্চল বা সাহেল অঞ্চল থেকে এই সময়ে সেনা হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক ওঠেছে। কারণ সেখানে আলকায়েদা ও ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সাথে সম্পৃক্তরা গত ছয় মাস ধরে আক্রমণাত্মক হামলা চালিয়েছে। নাইজার ও মালিতে তারা মাঝে মধ্যেই হামলা চালিয়ে আসছে। কয়েক শ’ চরমপন্থী বন্দুকধারী মোটরসাইকেলে হামলা পরিচালনা করেছে। বুরকিনা ফাসোয় সহিংসতায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিবেচনাধীন সিদ্ধান্তটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এস্পারের বিশ্বব্যাপী পর্যালোচনার অংশ, যিনি চীন ও রাশিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দিকে মনোনিবেশ করছেন এবং সেনা হ্রাস দ্রুততর করার উপায় খুঁজছেন। ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলির সাথে গত সোমবার বৈঠকের পর এস্পার বলেন, ‘আমার লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে বর্তমানে মোতায়েন থাকা সেনাদের ব্যাপারে সরাসরি এমন একটি নির্দেশনা দেয়া-যাতে আমাদের সময়, অর্থ ও জনশক্তি মুক্ত হয়।’
যৌথ লড়াইয়ের প্রস্তুতি আরো শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান এস্পার। তবে সাহেল অঞ্চল থেকে মার্কিন সেনাদেরকে হ্রাস না করার আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াশিংটনে সফররত ফ্লোরেন্স। শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে এই জাতীয় সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাদের যুক্তি হচ্ছে যে আফ্রিকা থেকে সেনা কমানোর মার্কিন সিদ্ধান্তের কারণে ১২০ কোটি মানুষে সমৃদ্ধ মহাদেশটিতে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বেড়ে যেতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার আফ্রিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ভূমিকা সম্পর্কে সিনেটে আর্মড সার্ভিস কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে আফ্রিকার মার্কিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল স্টিফেন টাউনসেন্ডের।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক জুড ডিপার্টম্যান্ট অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, পশ্চিম আফ্রিকায় সম্ভাব্য সৈন্য হ্রাস সংক্রান্ত আলোচনার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- আমেরিকা সেনা রাখতে আগ্রহী নয়। তারা এটার কৌশলগত গুরুত্ব দেখছে না। তাই আফ্রিকান মিত্র দেশগুলো থেকে সেনা কমানো এবং চালিয়ে যাওয়া যৌথ অভিযান বন্ধ করে দেয়াকে বিবেচনা করছে দেশটি। আফ্রিকা মহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ছয় হাজার সেনা রয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকাতে আফ্রিকা কমান্ডের প্রতি নির্দেশনা হলো পরামর্শ দেয়া ও সহায়তা করা। পূর্ব আফ্রিকাতে বেশির ভাগ মার্কিন সেনাই মিশনে আফ্রিকান সেনাদের সাথে থাকে। মার্কিন সহ¯্রাধিক সেনা বর্তমানে সাহেলে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর নাইজারে ১১ কোটি মার্কিন ডলারে একটি ড্রোন ঘাঁটিও তৈরি করেছে।
সিরিয়ায় আইএসআইএস এর পরাজয়ের পর থেকে বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, ক্যামেরুন ও শাদে সন্ত্রাসবাদ বাড়ার কথা উল্লেখ করে নাইজেরিয়ার তথ্যমন্ত্রী লাই মোহাম্মদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে না পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মোহাম্মদ এপিকে বলেন, ‘সুতরাং এখন আমাদের এখানে মার্কিন সেনাদের আরো বেশি প্রয়োজন বলে মনে করি আমি। আমি শুধু সৈনিক বা আমেরিকান সৈন্যদের কথাই বলছি না। তবে আমি মনে করছি আমাদের আরো সামরিক সহায়তা ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে জোরালো সমর্থন প্রয়োজন। অন্যথায় আমরা নিজেদের অজান্তেই সন্ত্রাসীদের হাত শক্তিশালী করব।’ সূত্র : এপি।