নির্বাচনের দিন ভোটাররা বাধাহীনভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, নির্বাচনী প্রচারণায় যে সাড়া তাদের দুই মেয়র প্রার্থী পেয়েছেন, তাতে সুষ্ঠু ভোট হলে ইতিবাচক ফলাফলই ঘরে তুলতে সক্ষম হবে। কিন্তু তাদের শঙ্কা, বিগত নির্বাচনগুলোতে ‘সহিংসতা ও কারচুপির কারণে’ ভোটারদের মধ্যে যে নির্বাচনবিমুখতা বিরাজ করছে, সেখান থেকে ভোটাররা বেরিয়ে এসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন কি না। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি যত বাড়বে, ধানের শীষের বিজয়ের সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় নিশ্চিতে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে বিএনপি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকা, ভোটারদের ভোট দেয়া নিশ্চিত করা, কেন্দ্র দখল ও কারচুপি ঠেকানোই তাদের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে দুই স্তরের কমিটি। পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। নেতাকর্মী ও ভোটারদের সাথে নিয়ে নির্বাচনের দিন ভোর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত এদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। মেয়র পদের জন্য দুই সিটিতে প্রায় ৫০ হাজার পোলিং এজেন্টকে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপি ঠেকানো গেলে তাদের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত। নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা থাকলেও ভোট মোটামুটি সুষ্ঠু হলেও বিএনপি প্রার্থীরা ভালো করবেন। তাই ভোটাররা যাতে বাধাহীনভাবে কেন্দ্রে আসতে পারে, সেটাই তাদের মূল ভাবনা। তারা বলেছেন, নির্বাচনে কারচুপি হলে শক্তভাবে রাজপথে নামারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তাই এবার ভোটের দিন কোনোভাবেই মাঠ ছেড়ে দেয়া হবে না। ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। তাদের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে বলে কেউ বিশ্বাস করে না। তার পরও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনকে আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই ভোট কেন্দ্র যাতে দখল বা নির্বাচনে কারচুপি যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। ভোটারদের সাথে নিয়ে ভোট কারচুপি ঠেকাতে যা যা করণীয় আমরা করব।
জানা গেছে, ভোটের দিন করণীয় নিয়ে দুই সিটির বিএনপি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডকে ছয়টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। একজন সিনিয়র নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের এসব জোনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একজন কেন্দ্রীয় নেতার সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে গঠন করা হয়েছে একটি করে কমিটি। কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে আলাদা কমিটি। দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন এসব কমিটিতে। ভোটের দিন এসব কমিটির সদস্যরা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবেন। একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটিকেও কয়েকটি জোনে ভাগ করে একইভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভোটের দিন কোনো কেন্দ্র দখল বা ভোট কারচুপির ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে তারা কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিমকে অবহিত করবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দেবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তরে বিএনপি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সিটি নির্বাচনকে আমরা এসিড টেস্ট হিসেবে নিয়েছি। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না। জনগণ বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নীরব বিপ্লব ঘটাবেন বলে আশা করি। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন সেটাই আমাদের মূল টার্গেট। এ জন্য ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে নেতাকর্মীরা পাহারায় থাকবেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে। ভোটের দিন ক্ষমতাসীনরা যাতে সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে না পারে সে জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।