রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নাগরিকদের কাছ থেকে দুই নিয়মে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে করহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন, যেটাকে বোঝা মনে করছেন উত্তরের নাগরিকরা। এ সিটিতে করের বিভাজন করা হয়েছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। এ নিয়ে উত্তরের নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর বিপরীতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক যুগ আগের করহারই বহাল রয়েছে। তবে দক্ষিণেও করহার পুনর্মূল্যায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সিটি করপোরেশন আদর্র্শ কর তফসিল ২০১৬ অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছর অর্র্থাৎ ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক মূল্যায়নের ওপর ২৩ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কর আগে ছিল ১২ শতাংশ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় কর বাড়ানোর বিষয়ে সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনি।’ তিনি তার অফিস সহকারীকে নিজের ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানতে বলেন। তার অফিস সহকারী আমাদের সময়কে বলেন, মাননীয় মেয়র মহোদয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর ১২ শতাংশ থেকে বৃৃদ্ধি করে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে গুলশান, বনানী, উত্তরাতে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। আইন যেহেতু সবার জন্য সমান, তাই ডিএনসিসির অন্যান্য এলাকায়ও একই কর হার বাস্তবায়ন করা হবে।’
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখনো পূর্র্বনির্ধারিত কর আদায় করছে। ১৯৮৯ সাল থেকে ১২ শতাংশ হারে কর আদায় করছে ডিএসসিসি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তারাও কর পুনর্মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করছে।
ডিএসসিসি এলাকায় নতুন করে কর না বাড়ানোর বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াবেন না- এটা মেয়র মহোদয়ের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল। দক্ষিণে নতুন করে কোনো কর বাড়ানো হয়নি। পূর্বের ন্যায় আদায় করা হচ্ছে। তবে বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর পুনমূল্যায়ন করার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু দিন আগে একটি সভা ছিল। সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে, কিছু নতুন খাত যুক্ত হবে আবার কিছু খাত বাদ দিয়ে একটা সংশোধনী করে ক্ষেত্র বিশেষে অর্থমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনীসহ সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন হলেই কেবল সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আামাদের আগের ১২ শতাংশ হারেই কর আদায় হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর কার্যালয় মহাখালীতে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক ফ্ল্যাটের মালিক ট্যাক্স দিতে এসে কর সুপারভাইজারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। রেভিনিউ সুপারভাইজার মো. শহিদুল হকের কক্ষে গুলশান-১ এর এক বাসিন্দা কর দিতে গিয়ে দেখেন দ্বিগুণ করা বাড়ানো হয়েছে। যেখানে আগে ১ লাখ টাকা কর হতো, সেই একই বাড়িতে এবার কর এসেছে ২ লাখ টাকা।
এমএ কাশেম নামের ওই ভদ্রলোক বলেন, ‘এটা মগের মুল্লুক নাকি। এমনিতে করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। বাসায় নিজে থাকি, দুটি ফ্ল্যাট অফিস হিসেবে ভাড়া দিয়েছি। এখন দুটি ফ্ল্যাট অফিস হিসেবে ভাড়া দেওয়ায় পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভবন না হওয়ার পরও আমাকে বাণিজ্যিক করের আওতায় দেখানো হচ্ছে। এটা কেমন নিয়ম?’