প্রবাস-বান্ধব সরকার তথা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক-নির্দেশনায় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেট গত অর্থ বছর প্রায় ৩৯ হাজার প্রবাসীকে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দিয়েছেন। গড়ে তা প্রতি কর্মদিবসে দাঁড়িয়েছে ১৭৬টির মত।
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে নর্দার্ন বুলেভার্ডে অবস্থিত কন্স্যুলেট অফিসে কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলামের সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানা যায়।
সার্ভিসসমূহের মধ্যে রয়েছে : এমআরপি-৮০০৫, ই-পাসপোর্ট-৩৫৩৩(২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু), এমআরভি-৪৩৬, এনভিআর-২৫৭২৪, দ্বৈত-নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট-৭৪০ এবং ট্র্যাভেল পারমিট-৩৪৪টি। এর বাইরেও রয়েছে প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্টের সত্যায়ন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, জন্মগত তারিখ সংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশন এবং মৃত প্রবাসীর ছাড়পত্র।
কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল জানালেন, এ কন্স্যুলেটের আওতায় রয়েছে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, নিউ হ্যামশায়ার, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড এবং ভারমন্ট-এই ৮ স্টেট। দূরবর্তী সিটি সমূহের প্রবাসীদের কথা বিবেচনায় রেখে ইতিপূর্বে বাফেলো, আটলান্টিক সিটি, বস্টন ইত্যাদি স্থানে অন্তত: ১০টি ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প পরিচালনা করেছি।
এগুলোতে সহকর্মী ডেপুটি কন্সাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান, কাউন্সেলর আয়শা হক, ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট এবং ভিসা উইং) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী, ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ভাইস কন্সাল ইসরাত জাহানসহ কূটনীতিকরা সার্ভিস দিয়েছেন।
ড. মনিরুল জানালেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্বেও সার্ভিসের মান সমুন্নত রাখতে সকলে সচেষ্ট রয়েছি। এছাড়া, মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণকারি প্রবাসীদের স্বার্থে আমরা দিনে দিনেই এনভিআর ইস্যু করে থাকি অর্থাৎ সকালে জমা নিয়ে বিকেলে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে।
সোমবার সাপ্তাহিক কর্মদিবসের প্রথমদিন এই কন্স্যুলেটে দেখা যায় দেড় শতাধিক প্রবাসীকে। বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসা প্রবাসীদের দেখলে অনেকের মনে হতে পারে যে, তারা চাকরির ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকের সাথে শিশু সন্তানও ছিল। সকলেই নিজ নিজ আবেদন জমা দেয়ার অপেক্ষা অথবা পিকআপের অপেক্ষায় থাকেন। এতবেশি প্রবাসীর সেবা সুষ্ঠুভাবে প্রদান করা সম্ভব হবে সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করায়-উল্লেখ করেন কন্সাল জেনারেল। তবে তিনি জানান যে, কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হলে সার্ভিসটি আরো দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে সক্ষম হতাম। এতদসত্বেও আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি সবকিছু সম্পাদনে। চেষ্টার কোন কমতি নেই, আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই। সব সময় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রবাসীরা যাতে কাঙ্খিত সার্ভিসটি পেতে পারেন।
কন্সাল জেনারেল বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশিরা এ অফিসে ঢুকেই যেন মনে করেন যে, তারা বাংলাদেশের একটি ভূখণ্ডে ঢুকেছেন। পাশাপাশি আমি সবসময় সহকর্মীগণকে বলে থাকি যে, অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সেবাটি দেবেন এবং প্রবাসীরা যাদে সন্তুষ্টচিত্তে কন্স্যুলেট থেকে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারেন। কারো আবেদন যদি অসম্পূর্ণ কিংবা ত্রুটিপূর্ণ থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীকেও কনভিন্স করতে হবে পরবর্তীতে সংশোধনসহ আসার জন্যে।
ইউএস পাসপোর্টে এনভিআরের সীল শুধু একবারই নিতে হয় অর্থাৎ মেয়াদ পর্যন্ত। যখন নতুন পাসপোর্ট করা হবে তখোনই ফি দিয়ে পুনরায় সীল নিতে হবে। নো ভিসা রিক্যুয়ার্ড তথা এনভিআর তারাই পেয়ে থাকেন, যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারি সন্তানেরাও পেয়ে থাকেন।
কন্সাল জেনারেল উল্লেখ করেন, গত জুন পর্যন্ত এক বছরে এই মিশনের দূরবর্তী স্থানে ১০টি ভ্রাম্যমাণ কন্স্যুলেট ক্যাম্প করা হয়েছিল সার্ভিসসমূহকে প্রবাসীগণের দোরগোড়ায় নিতে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আটলান্টিক সিটি, প্যাটারসন, বস্টন এবং কাকেটিকাটে।
নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটের আওতায় ৫ লাখের বেশি প্রবাসী রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়। এর বড় একটি অংশ ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। এনভিআর ইস্যু থেকেস তা দৃশ্যমান হয়। এসব প্রবাসীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ মার্কিন মুল্লুকে উদভাসিত করার পরিক্রমাতেও সরব দেখা যাচ্ছে কন্সাল জেনারেলকে। সুযোগ পেলেই তিনি ছুটে যান স্টেট সিনেটর, কংগ্রেসম্যান অথবা স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যানের অফিসে। সভা-সমাবেশেও একই আহবান উচ্চারণ করেন ড. মনিরুল। সিটি প্রশাসনের সাথেও বিদ্যমান সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কল্যাণে ভ’মিকা রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নিউইয়র্ক-নিউজার্সি-কানেকটিকাট-ম্যাসাচুসেটস-নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের নেতৃবৃন্দের অনেকেই নিউইয়র্ক কন্স্যুলেটের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে লাশ পরিবহনের স্বার্থে শুধু ছুটির দিন নয়, গভীর রাতেও কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্ট ইস্যু করছেন। এমন প্রশংসার অভিব্যক্তি কন্স্যুলেটে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানেও নেতৃবৃন্দ উপস্থাপন করে থাকেন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ কিছুটা কমতির মুখে ধাবিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিয়ে বিশেষ এক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন কন্সাল জেনারেল। সেখানে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এসেছিলেন রাষ্ট্রদূত ডা. মোহাম্মদ ইমরান। অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং প্রবাসীদের সামগ্রিক উন্নয়ন-কল্যাণে সাধ্যমত সরব থাকতে দেখা যায় ড. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এই কন্স্যুলেটকে। আর এরমধ্যদিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘প্রবাস-বান্ধব’ বৈশিষ্ট দৃশ্যমান হচ্ছে বহুজাতিক এ সমাজে।