গত ২৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউজারসি রাজ্যের আটলান্টিক সিটির একটি ভেনুতে কৃষ্ণভক্তদের উদ্যোগে ভাগবত গীতার আলোকে “মন নিয়ন্ত্রণ” শীর্ষক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন পশ্চিম ভার্জিনিয়াস্থ নিউ বৃন্দাবনের ব্রহ্মচারী শুভানন্দ দাস।আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ বিশ্বে প্রবাস প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যাতে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে সে লক্ষ্যেই তাদের এই আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রবাস প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সহ তাদের অভিবাবকরা অংশগ্রহন করেন।
কৃষ্ণভক্ত সুমন মজুমদার এর সঞ্চালনায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা হলেন, ত্রয়া দে, নির্ঝর দে, দিগন্ত রায়, বিবেক দাশ, অদ্রি চৌধুরী, সৃজন রায়, দেবেশ মালাকার, কানাই দে, শায়ান চক্রবর্তী, শিখা মজুমদার প্রমুখ ।এছাড়া অভিভাবকদের মধ্যে আটলান্টিক সিটি স্কুল বোর্ড সদস্য সুব্রত চৌধুরী, সজল চক্রবর্তী, গঙ্গা সাহা, মেরি দে, সুমি মজুমদার, শান্তনু মজুমদার প্রমুখ অংশগ্রহন করেন।
বক্তৃতার শুরুতে শুভানন্দ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, বিশ্ব মানবতার কল্যাণ সাধনই ভাগবত গীতার লক্ষ্য। ভাগবত গীতা পাঠ ও এর মর্মার্থ অনুধাবনের মাধ্যমেই ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ বিশ্বে একজন ব্যক্তি তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।
তিনি বলেন, মানুষের মন কখনো এক বিষয়ের মধ্যে স্থির থাকে না। কোনও এক সময় মন একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, পরক্ষণেই আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করে। অনিয়ন্ত্রিত মন একজন মানুষকে সহজেই অধঃপতিত করে।
এমনকি অর্জুনের মত মহান ব্যক্তিত্বও অকপটে স্বীকার করেছেন যে, মনকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছেঃ “হে কৃষ্ণ! মন অত্যন্ত চঞ্চল, শরীর ও ইন্দ্রিয়ানি বিক্ষেপ উৎপাদক,দুর্দমনীয় এবং অত্যন্ত বলবান, তাই তাকে নিগ্রহ করা বায়ুকে বশীভূত করার থেকেও অধিকতর কঠিন বলে আমি মনে করি।”
তিনি আরো বলেন, আধুনিককালে আমরা ব্যবহারিকভাবে দেখতে পাই মানুষের মানসিকভাবে চাপগ্রস্থ অবস্থা, বিশ্বস্ততার অভাব, দৃঢ়তার অভাব ইত্যাদি সবই অনিয়ন্ত্রিত মনের জন্যই হয়ে থাকে।
সমস্ত বিশ্বকে প্রাপ্ত হয়েও যদি কেউ নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তাহলে কি লাভ? অনেকের অর্থ, প্রতিপত্তি, দৈহিক সৌন্দর্য বা শক্তি থাকা সত্ত্বেও মনে সুখ নেই।
সুখলাভের প্রকৃত রহস্য হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত মন, যা ক্রমে ক্রমে ভগবদ্ভাবনাময় জীবন ধারার মাধ্যমে অর্জিত হয় ।
ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “যিনি তাঁর মনকে জয় করেছেন, তাঁর মন তাঁর পরম বন্ধু, কিন্তু যিনি তা করতে অক্ষম, তাঁর মনই তাঁর পরম শত্রু।”
ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেনঃ “সদগুরুর শরনাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্রচিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃত্রিম সেবার দ্বারা তাঁকে সম্ভুষ্ট কর। তাহলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষেরা তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবেন।”
এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বুদ্ধি আরো শানিত হবে এবং অসংযত মন অচিরেই শান্ত হবে।
তিনি বলেন, দুটি বিষয়ের মাধ্যমে মনকে বশে আনা যায়-
ইন্দ্রিয়সমূহকে জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার ও তাদের ভগবানের সেবায় নিয়োগ।
প্রধান বক্তা আরো বলেন, ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্র হচ্ছে মনের মহা পরিত্রাতা।তিনি ব্যাখ্য করে বলেন, ‘মন্ত্র’ কথাটির অর্থ যা মনকে ত্রাণ করে। মহামন্ত্র মনের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিত্রাতা। ভগবানের দিব্যনাম কীর্তন ছাড়া আর কোনো কৃত্রিম পন্থা নেই যা আমাদের ভগবৎ চেতনার পুনর্জাগরন ঘটাতে পারে।
নিজেকে কলিযুগের কলুষ থেকে মুক্ত রাখতে এই ‘হরে কৃষ্ণ’
মহামন্ত্র কীর্তন করা ছাড়া অন্য কোনো মহান পন্থা সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র গ্রন্থে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অনুরূপভাবে এই নির্দিষ্ট কলিযুগের জন্য ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রই অনুমোদিত। এই অপ্রাকৃত শব্দ তরঙ্গ, ভগবানের দিব্য নামের প্রভাব সার্বজনীন নীতি। যেমন পদার্থ বিদ্যার মাধ্যাকর্ষণ বা অন্য কোনো সূত্র।