নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার, ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ধর্মভিত্তিক দলটির পক্ষ থেকে একই সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কারে ১৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় সম্মেলনে দলের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করিম এসব দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেন।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এএমএম আলম, গণ অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান প্রমুখ।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও বাংলাদেশ একাত্তর-পূর্বের মতোই শ্মশান রয়ে গেছে। ২০২৩ সালে এসেও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যায়। দেশের সম্পদ বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে।’
সম্মেলনে সরকারের উদ্দেশে তিনি ১৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-
১. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. দেশে মদ ও সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. শিক্ষার সব স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৪. কারান্তরীণ সব মজলুম আলেম ও রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।
৫. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
৬. নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৭. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।
৮. নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। রেডিও-টিভিসহ সব সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৯. দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১০. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
১১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
১২. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
১৩. সব রাজনৈতিক দলের জন্য সভা-সমাবেশসহ সংবিধান স্বীকৃত সব রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
১৪. বেকারত্ব দূরীকরণে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। আশু সমাধান হিসেবে বেকারদের বেকার ভাতা দিতে হবে।
১৫. নাগরিকদের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। দেশি-বিদেশি কোনো অজুহাতেই মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে ১৯ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হলো- গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, শিল্পায়ন, কৃষি ও জ্বালানি খাতে বিদ্যমান সব দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করা, খাতগুলোকে শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক করা, স্বনির্ভর এনার্জি সেক্টর নির্মাণে জাতীয় কাউন্সিল গঠন, কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনা তথা পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ পুরো ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করা।