নিউইয়র্কে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার ভবন কেনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক মইনুলকে শো’কজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে জালালাবাদ ইউএসএ ইনক করপোরেশন গঠন করে সম্প্রতি এস্টারিয়ায় ১টি ২ ফ্যামেলির বাড়ি কেনা হয়। যার নাম দেয়া হয়েছে জালালাবাদ ভবন। এই বাড়ি ক্রয়কালে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র ফান্ড ব্যবহার করা হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি রোববার ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এতে বৃহত্তর সিলেটের উল্লেখযোগ্য সংখক সিলেটবাসী উপস্থিত ছিলেন। কমিউনিটির বেশকিছু নেতৃবৃন্দও ছিলেন উপস্থিত। তবে এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল খান, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রোকন উদ্দীনসহ কার্যকরি কমিটির অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন।ভবনকে ব্যক্তি মালিকানাধীন অভিহিত করে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র ভবনের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন সভাপতি বদরুল খানসহ কমিটির ১৩ সদস্য।
১০ জানুয়ারি বুধবার সংগঠনের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৬ এর ধারা ৭ (ক), ৯( গ) ও ১৬ (৬) লংঘনের অভিযোগে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে সংগঠনের অর্থ তহবিলে ফেরত না দেয়া ও জালালাবাদ ইউএসএ ইনক করপোরেশন এর নামে কেনা বাড়িকে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ’র কার্যালয় হিসেবে অপপ্রচারের জন্য কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি বদরুল খানের নেতৃত্বাধীন অংশের প্রচার ও দফতর সম্পাদক ফয়সাল আলম স্বাক্ষরিত সংবাদপত্রে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মইনুল ইসলামকে ‘শো কজের’ তথ্য রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৯ই জানুয়ারি ২০২৩ সোমবার সন্ধ্যা ৭ টায় নিউইয়র্কের ওজন পার্কের মমোস পার্টি হলে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র কার্যকরী কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি বদরুল খানের সভাপতিত্বে এবং সহ সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সংগঠনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি এম ডি লোকমান হোসেন, সহ সভাপতি সফিউদ্দিন তালুকদার, সহ-সাধারণ সম্পাধক রোকন হাকিম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলিম, সাহিত্য সম্পাদক হোসেন আহমদ, ক্রীড়া সম্পাদক মান্না মুনতাসির, সমাজকল্যাণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক ফয়সাল আলম, কার্যকরী সদস্য শামীম আহমদ, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মানিক। সভায় সংগঠনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
সিদ্ধান্তসমূহ : (এক) বিগত ৭ই অক্টোবর ২০২২ অনুষ্ঠিত সংগঠনের কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাস্টিবোর্ডের যৌথ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষে আলোচনা ও অবহিতকরণ। ৭ই জানুয়ারী ২০২৩ সংগঠনের সভাপতির সমিপে সংগঠনের ট্রাষ্টি বোর্ডের নোটিশ বা নির্দেশনার আলোকে আলোচনা হয়। তারই প্রেক্ষিতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ময়নুল ইসলামকে নিজের কর্পোরেশন ‘জালালাবাদ ইউএসএ ইনক’র নামে বাড়ি ক্রয়ে বিগত কমিটির কোষাধ্যক্ষ থাকাবস্থায় সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও অগঠনতান্ত্রিক পন্থায় সংগঠনের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলনকৃত সমুদয় অর্থ (উক্ত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক) অনতিবিলম্বে সংগঠনের ব্যাংক একাউন্টে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ও উপরন্তু, উল্লেখিত ভবনকে কার্যকরী কমিটি বা উপদেষ্টা পরিষদের অনুমতি ব্যতিরেকে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কার্যালয় বা ভবন হিসাবে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে “জালালাবাদ ইউএসএ ইনক’ কর্পোরেশনের নামে অসাংগঠনিক পন্থায় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলিত সমুদয় অর্থ কেন সংগঠনের ব্যাংক একাউন্টে জমা দেওয়া হয়নি এবং উল্লেখিত ভবনকে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র কার্যালয় হিসেবে অপপ্রচারের জন্য কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না” মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
(দুই) সংগঠনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার। (সভার স্থান ও সময় পরে জানানো হবে)।
(তিন) জালালাবাদ এসোসিয়েশনের পরিস্থিতির আলোকে সংগঠনের প্রাক্তন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ই জানুয়ারি, সোমবার। (সভার স্থান ও সময় পরে জানানো হবে)।
(চার) যথাযোগ্য মর্যাদায় আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
(৫) যথাযোগ্য মর্যাদায় বাঙালির মহান স্বাধীনতা দিবস পালন উপলক্ষে আগামী ২৬শে মার্চ ২০২৩ রবিবার ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
(৬) বিগত সময়ে বাংলাদেশে সৃষ্ট বন্যায় দুর্গতদের মাঝে $২৩,০০০ (তেইশ হাজার ডলার) বিতরণ উপলক্ষে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যগণ হলেন- সহ সভাপতি শফিউদ্দিন তালুকদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলিম।
বুধবার রাাতে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র নোটিশের ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম বলেছেন, কারন দর্শানোর নোটিশ ‘ইনভেলিড’। আমি একজন নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক। ট্রাস্টিবোর্ড কখনোই তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে লিখিতভাবে দেননি। তারা একটি মধ্যরাতে অন্ধকার বেজমেন্টে তা বলেছিল। আমি তা অনেককেই জানিয়েছিলাম। দয়া করে সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী ও সাবেক সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজের সাথে কথা বলুন। কারন ভবনটি কেনা হয়েছিল গত কমিটির মাধ্যমে। আমি মইনুল চৌধুরী ও শেফাজের সাথে লিগাল এগ্রিমেন্ট ও রিলিজপত্র স্বাক্ষর করেছিলাম। আমি এটা করেছি শুধু ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের জন্য। যখনই আমি ৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের মর্টগেজ ও অন্যান্য খরচের দায় থেকে মুক্ত হবো তখনই ক্রয়কৃত ভবনটি জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র কাছে ট্রান্সফার করতে বাধ্য থাকব।
সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম আরও বলেন, এই ভবনটির দাম এখন ১,৫ মিলিয়ন ডলার। আমার বোধগম্য হচ্ছে না বর্তমান সভাপতি কেন কমিউনিটি, কার্যকরি কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডে এই ভবনের বিরুদ্ধে বিষ ছড়াচ্ছেন। আমি কোনভাবেই এই মুল্যবান সম্পদ হাতছাড়া হতে দেব না। এসোসিয়েশনের সাধারন সদস্যরাই এই ভবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ৫ জনের গ্রুপে কাজ হবে না (এটাই হচ্ছে বর্তমান প্রেসিডেন্টের খারাপ নেতৃত্ব)। সবাই জানেন, ফিলাডেলফিয়ার ভবন তিনিই বিক্রি করেছিলেন। তিনি সবাইকে রেখেছিলেন অন্ধকারে। তিনিই বিনা প্রয়োজনে এস্টোরিয়ায় অফিস ভাড়া করে অর্থ অপচয় করেছেন। মইনুল ইসলাম বর্তমান সভাপতির উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি কি এমন একটি প্রোপার্টি কিনতে পারবেন? আমি নিশ্চিত, তা আরও ৩০ বছর লাগবে। ঘৃনাকারিরা (হেটারস) অফিসটি দেখে যান । তারপর বিরোধিতা করুন ।