দেশের পুঁজিবাজারে কোনোভাবেই ফিরছে না বিনিয়োগকারীদের আস্থা। এতে শেয়ারবাজার থেকে অনেকেই বের হয়ে যাচ্ছেন। নতুন কোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করার পরিবর্তে বিক্রি করছেন বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন কোনো বিনিয়োগকারীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেটি হলে তার ধাক্কা লাগবে দেশের অর্থনীতিতেও। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ভর করেছে। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অপর দিকে কমেছে প্রবাসী ও রফতানি আয়। এসব খবরে দেশের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে একটি গোষ্ঠী কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ নিচ্ছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ সময়ে এসে বড় ধরনের দরপতনের মতো যৌক্তিক কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি পক্ষ আতঙ্ক ছড়িয়ে বাজারে পতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করছে।
বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘আমাদের বাজারে একটি পক্ষ রয়েছে, যারা তাদের প্রয়োজনে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ায়। আবার তারাই কখনো কখনো গুজব ছড়িয়ে দাম কমায় কম দামে শেয়ার কেনার জন্য। তবে এ কথা ঠিক বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। এসব অনিশ্চয়তাকে পুঁজি করে হয়তো কেউ কেউ সুযোগ নেন।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। দুই স্টকে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
ডিএসইর লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে। আর সিএসইর লেনদেন সাড়ে ৫ কোটি টাকার ঘরে রয়েছে। ডিএসইতে ১৩৭টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। ২৭টির বেড়েছে। সিএসইতে ৬০টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। ১৭টির বেড়েছে। উভয় শেয়ারবাজারে রয়েছে বিক্রির চাপের হিড়িক। ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ারদর উত্থান চেয়ে পতন পাঁচগুণ বেশি।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন গতকাল ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। বিক্রেতার চাপ বহুগুণ বেশি ছিল। ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ারদর উত্থান তুলনায় পতন ৫ দশমিক শূন্য ৭ গুণ বেশি। অপর দিকে সিএসইতেও কোম্পানির শেয়ারদর উত্থান তুলনায় পতন ৩ দশমিক ৫৩ গুণ বেশি।
রয়েল ক্যাপিটাল হাউজের বিনিয়োগকারী আমান বলেন, বছরের শুরুতে সূচকের পতন ছিল। সময়ের পালাক্রমে সামান্য উত্থান হয় সূচক। কিন্তু পরবর্তীতে ফের পতন। একই অবস্থা লেনদেনে। বছরের শুরুর ডিএসইর দেড় শ’ কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে চার শ’ কোটি টাকায় এসেছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।
দর পতনের আশঙ্কায় রয়েছি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বর্তমান লেনদেনে শেয়ার বিক্রি প্রবণতাই বেশি। এই বিক্রিতে অধিকাংশ কোম্পানির দর কমেছে। সামনে আরো মন্দা হবে। এখন কী করবো, লসে শেয়ার বিক্রিতে ঝুঁকছি।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গতকাল ডিএসইতে ৪৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার। এ দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৪৫ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে দুই হাজার ২২২ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে এবং এক হাজার ৩৬৬ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে।
এ দিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৭টি এবং কমেছে ১৩৭টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৪৬টির। এ দিন ডিএসইতে সোনালী পেপারের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন সোনালী পেপার ৩৭ কোটি তিন লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিস ২২ কোটি ৩ লাখ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকস ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ১৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, বিডি ল্যাম্পস ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচ ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, এপেক্স ফুটওয়্যার ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আমরা নেটওয়ার্ক ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, জেমিনি সি ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং ওরিয়ন ইনফিউশনের ১২ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপর দিকে, সিএসইতে বুধবার লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৩২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৭টি, কমেছে ৬০টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৫৫টির।
গতকাল সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৭ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই-৫০ সূচক দশমিক ৭৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৩৫ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১৬ দশমিক ৪২ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩২৬ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩১৫ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৫০ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে এবং এক হাজার ১৬৭ পয়েন্টে।
এ দিন সিএসইতে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এ দিন পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স এক কোটি ২৬ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এ দিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সি পার্ল বিচ ৬৪ লাখ টাকা, শাইনপুকুর ৩০ লাখ টাকা, বেঙ্গল ইউন্ডসর ২৯ লাখ টাকা, বিএসআরএম স্টিল ২৩ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ১৮ লাখ টাকা, বসুন্ধরা পেপার ১৮ লাখ টাকা, প্রাণ ১৬ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্স ১৫ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ১৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।