কাশ্মিরে যে কী হচ্ছে তা কেউই জানেন না। কেউ জানে না যে, নয়াদিল্লি কী ভাবছে। ভারতের প্রভাবশালী বহিঃগোয়েন্দা সংস্থা র-এর সাবেক প্রধান অমরজিত সিং দুলাত দেশটির অবরুদ্ধ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। দুলাতের মতো ভারতে খুব অল্পসংখ্যক লোকই আছেন, যারা কাশ্মিরকে ভালোভাবে বোঝেন ও জানেন। অথচ সেই দুলাতও এখন হাল ছেড়ে দিয়ে এমন কথা বলছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল হেরাল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন সাবেক এই গোয়েন্দা প্রধান।
তিনি বলেন, কাশ্মিরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যাচ্ছে না। সরকার দাবি করছে সব কিছু স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যরা বলছেন, কাশ্মিরিরা ভাগ্যের কাছে সব সঁপে দিয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, রাস্তায় না নেমে কাশ্মিরিরা ভালোই করেছেন। কারণ, এ অঞ্চলে প্রতি ৩০ জন বেসামরিক ব্যক্তির বিপরীতে একজন সেনা সদস্য নিয়োজিত আছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সামনে দু’টি উপায় আছে। প্রথমটি হলো যুদ্ধ, যেটি সবাই বলবে পাগলামি। অন্যটি হলো স্থায়ীভাবে এভাবে রয়ে যাওয়া, যেটি এখন হচ্ছে এবং সেটি যুদ্ধের চেয়েও অনেক খারাপ।
দুলাত মনে করেন, কাশ্মিরিরা অনুভব করছে, ভারতের মানুষ তাদের হতাশ করেছে। তার ভাষ্য, ‘দিল্লির সাথে সব সময়ই সমস্যা ছিল কাশ্মিরের। কিন্তু ভারতের মানুষের সাথে তাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমাদের এটি অবশ্যই ভাবতে হবে। বিষয়টা কেন এখন কাশ্মিরের জনগণ বনাম ভারতের জনগণ হয়ে উঠল, যেখানে কাশ্মিরের মানুষও ভারতের জনগণ।’ তিনি আরো বলেন, কাশ্মিরিরা মনে করছে যে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না, তাদের দোষ কী।
কাশ্মিরের স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সুরক্ষা বাতিলের প্রাক্কালে সরকার সেখানে যে অবরোধ আরোপ করেছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষকে যখন বন্দীর মতো করে রাখা হলো, আমরা জানতাম যে এটি দীর্ঘায়িত হবে। এটি হয়তো আরো তিন বছরও থাকতে পারে বা কয়েক মাসও হতে পারে, যদি না আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দেন।
সাবেক এই গোয়েন্দা প্রধান সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, যে পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে সরকার সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে, সেটি ব্যবহার করে কয়দিন এই স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে পারবে। তার ভাষ্য, ‘এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে; কেননা লোকজনকে আটক রাখার কোনো উপায় আর সরকারের ছিল না। যখন আইনি কোনো উপায় আর না থাকে, তখনই এই আইনের আশ্রয় নিতে হয় সরকারের। কিন্তু পার্থক্য হলো যে, আগে এই আইন ব্যবহৃত হতো জঙ্গিদের বন্দী করার ক্ষেত্রে। এখন এটি ব্যবহৃত হচ্ছে রাজনীতিকদের বন্দী করার ক্ষেত্রে।’ দুলাত মনে করেন, কাশ্মির ইস্যু কেবল নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেই মোকাবেলা করা হচ্ছে। কিন্তু এটি কেবল নিরাপত্তা ইস্যুই নয়, এটি একটি রাজনৈতিক, আবেগিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। আগে হোক বা পরে হোক, সরকারকে এটি বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, আসল প্রশ্ন হলো, সরকার শান্তি বা আলোচনাকে উপায় মনে করে কি না। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে অন্য উপায় কী? আর মাত্র দু’টি উপায় আছে। প্রথমটি হলো যুদ্ধ, যেটি সবাই বলবে পাগলামি। অন্য বিকল্প হলো স্থায়ীভাবে এভাবে রয়ে যাওয়া, যেটি এখন হচ্ছে এবং সেটি যুদ্ধের চেয়েও অনেক খারাপ। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘরোয়াভাবে বিজেপি ঘটনাপ্রবাহের ন্যারেটিভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বিশ্বজুড়ে এ বিষয়টির ওপর সরকারের চাওয়ার চেয়েও বেশি মনোযোগ পড়েছে।
র-এর সাবেক প্রধান বলেন, কাশ্মির নিয়ে আমাদের বক্তব্য হলো, এটি অন্য কারো বিষয় নয়। ভালো হোক, খারাপ হোক, এটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়। কিন্তু এখন এটি সবার বিষয় হয়ে গেছে। পশ্চিমে বিষয়টি সেদিকেই চলে গেছে, আমরা পছন্দ করি, আর না-ই করি। প্রশ্ন উঠছেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মাসের শেষের দিকে ভারত সফর করবেন। তিনি ইতোমধ্যে দুইবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ নিয়ে মধ্যস্থতার কথা বলেছেন। এটি আমাদের জন্য সুখকর কিছু নয়। কারণ, মধ্যস্থতা আমাদের প্রয়োজন নেই।