বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৯ অপরাহ্ন

থার্ড টার্মিনাল সামলাবে জাপানি প্রতিষ্ঠান

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৬৩ বার

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে জাপানি প্রতিষ্ঠান। এই দায়িত্ব কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে দেওয়া হবে, তা নির্ধারণে সম্প্রতি জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘নিপ্পন কোয়েল’কে নিয়োগ দিয়েছে ‘বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ’ (বেবিচক)।

বেবিচক সূত্র জানায়, জাপানের আর্থিক সহায়তায় শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ চলছে। নির্মাণকাজও করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা এবং গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং করতে দেশি-বিদেশি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। জাপানের পক্ষ থেকে টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। একই সঙ্গে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করার আগ্রহও জানিয়েছে জাপান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিবাচক বাংলাদেশ সরকার। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষদিকে উদ্বোধন করা হবে এই টার্মিনাল।

বেবিচক বলছে, বর্তমানে বিমানবন্দর পরিচালিত হচ্ছে বেবিচকের তত্ত্বাবধানে তাদের নিজস্ব জলবল দিয়ে। অন্যদিকে বিমানবন্দরে বিমানের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে এ কাজে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বছরের পর বছর ধরে ভুগছে বিমানবন্দর। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর কাছ থেকে চার্জ নিলেও সময়মতো কাক্সিক্ষত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে না বিমান। ফলে এয়ারলাইনগুলো সময়মতো ফ্লাইট ছাড়তে পারছে না, ভোগান্তির মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। এমনকি বিমানবন্দরে ঘটছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংজনিত দুর্ঘটনা। এ জন্য তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় আসেÑ এই টার্মিনালের পরিচালনা করবে কে?

সূত্র জানায়, জাপানের সহযোগিতায় পিপিপির ভিত্তিতে থার্ড টার্মিনালের অপারেশনাল ও হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কোন পদ্ধতিতে কাজ হবে, পরিচালন ব্যয় কীভাবে খরচ হবে, আয়ের অর্থ কীভাবে বেবিচক পাবে, এ বিষয়ে সমীক্ষা করছে বেবিচক।

জানা গেছে, জাপানি প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দেবে। এটা দেওয়ার জন্য তারা বিনিয়োগ করবে। তবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের আদায়কৃত চার্র্জ থাকবে বেবিচকের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া প্রশাসনিক নিরাপত্তা, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন স্ব স্ব বিভাগ পরিচালনা করবে।

বেবিচকে ২২ মার্চের চিঠিতে বলা হয়, জাপানের আর্থিক সহায়তায় শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পকাজ চলমান আছে, যা আগামী অক্টোবরে চালু হবে। তৃতীয় টার্মিনালের কাজ সমাপ্তির পর এটার অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক ইনভেস্টর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গত ১৯ জানুয়ারি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরামর্শক নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

অপর এক চিঠিতে বলা হয়, এই প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় টার্মিনালে বিভিন্ন আধুনিক যাত্রী হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি স্থাপিত হবে। এগুলো বুঝে নেওয়া এবং অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স কাজ পরিচালনার জন্য আগামী জুন থেকে বেবিচককে জনবল নিয়োগ করতে হবে।

২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ উদ্বোধন হয়। জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসংয়ের এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকিটা আসবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে।

প্রকল্পের একাধিক প্রকৌশলী জানান, ৩৫০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে ৪০টি কেবিন এক্সরে মেশিন, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট, ১১টি বডি স্ক্যানার ও টানেল। থাকবে ৫৪ হাজার বর্গমিটারের বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং, নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স এবং ৬৩ হাজার বর্গমিটারের এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স। এ ছাড়া থাকবে রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ৪ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ইকুইপমেন্ট স্টেশন। উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য তৈরি হচ্ছে ২৪ হাজার বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর), ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (অন্যান্য) এবং ২২ হাজার বর্গমিটার র?্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর)। এ ছাড়া থাকবে ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার র?্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (দক্ষিণ)। টার্মিনালের চারদিকে থাকবে নিñিদ্র সীমানাপ্রাচীর, সিকিউরিটি গেট, গার্ডরুম এবং ওয়াচ টাওয়ার। টার্মিনালটির অন্যতম আকর্ষণ ফানেল টানেল। উড়োজাহাজ রাখার জন্য থাকবে ৩৬টি পার্কিং বে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের অ্যাপ্রোনে এক সঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। বহুতল কার পার্কিং ভবনে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। এই টার্মিনালের সেবার মানও আন্তর্জাতিক মানেই রাখা হবে। অনেকেই এই টার্মিনাল পরিচালনা ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জাপানের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। যে প্রতিষ্ঠানই কাজ পরিচালনা করুক না কেন, চার্জ জমা হবে বেবিচকের তহবিলে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com