রমজানে মাসব্যাপী রোজা রাখার পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আনন্দকে পূর্ণতা দেয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধনী দেশ সিঙ্গাপুরে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে আগামীকাল শনিবার। অঞ্চল ও স্থানভেদে ঈদ পালনে আছে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা।
সিঙ্গাপুরে ঈদুল ফিতরকে স্থানীয় ভাষায় ‘হরি রায়া আইদিল ফিত্রি’ বা ‘হরি রায় পুয়াসা’ নামে পরিচিত। সিঙ্গাপুরে ঈদের দিন সরকারিভাবে ছুটি থাকে। ঈদের দিন সিঙ্গাপুরে মুসলিম পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে নানা পদের রান্না হয়। সেগুলো আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিলি করা হয়। এ ছাড়া দিনটিকে পারস্পারিক ক্ষমা ও সংশোধন করার একটি সময় হিসেবে দেখেন সেখানকার মুসলমানরা।
সিঙ্গাপুরে ঈদুল ফিতরে কী ঘটে
সিঙ্গাপুরে মুসলমান মালয় পরিবারগুলো একই বা অনুরূপ রঙের থিমে নতুন পোশাক পরে, নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক বাজু কুরুং (ঢিলেঢালা-ফিটিং পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের একটি পোশাক, একটি স্কার্ট ও ব্লাউজ) পরিধান করেন। পুরুষরা একটি ঢিলেঢালা-লম্বা হাতাওয়ালা ফিটিং শার্ট ও লম্বা প্যান্টসহ একটি সাম্পিন (ঐতিহ্যগত নিদর্শনসহ বোনা উপকরণ দিয়ে তৈরি একটি তিন-চতুর্থাংশ দৈর্ঘ্যের কাপড়) পরিধান করেন। সিঙ্গাপুরের ঈদের দিনে সাধারণত মুসলিম পরিবারগুলো কবরস্থানে প্রিয়জনের জিয়ারত ও তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যায়।
ঈদের দিনের ঐতিহ্য
সিঙ্গাপুরের ঈদের দিন মুসলমানদের বাড়ি ও মসজিদগুলোতে ‘সেলামাত হরি রায়া আদিলফিত্রি’ চিহ্ন, তেলের বাতি, লণ্ঠন, রঙিন স্ট্রিং লাইট, কেতুপাট ডাম্পলিং এবং অর্ধচন্দ্র ও তারার মালার মতো চিহ্ন দিয়ে সাজসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ঈদের আগে সরকারিভাবে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন রাস্তা, মসজিদে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। ঈদের দিন উপহার হিসেবে স্যাম্পুল ডুইট রায়া বা টাকা সংবলিত সবুজ প্যাকেট শিশু ও বয়স্কদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
নানা পদের খাবার
এই দিনে অতিথি আপ্যায়ন করার জন্য প্রচুর সুস্বাদু খাবার এবং স্ন্যাকসের আয়োজন করে স্থানীয় নাগরিকরা। এর মধ্যে রয়েছে লন্টং সায়ুর লোদেহ (নারকেলের ঝোলের মধ্যে সবজি মিশ্রিত করা), গরুর মাংসের রেন্ডাং (মশলাদার গরুর মাংসের তরকারি), কুইহ ব্যাঙ্কিট (টেপিওকা কুকিজ) এবং কুইহ টার্টস (আনারস টার্ট)।
মুসলমানরা এই দিনে একে অপরকে বাংলাদেশের ‘ঈদ মোবারক’ এর মতো ‘সেলামত হরি রায়’ বলে অভিবাদন জানায়, যার অর্থ ‘আশীর্বাদপূর্ণ ছুটির দিন’। আরেকটি হলো ‘সেলামত হরি রায়, মাফ জহির দান বাতিন’, যার অর্থ ‘ঈদ মোবারক, আমি কোনো শারীরিক এবং মানসিক ভুলের জন্য ক্ষমা চাই’।