রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় সোমবার রাতে যে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল, অতিরিক্ত চাপই তার কারণ বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে ঈদের সময় বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকার কারণে গ্যাসের পাইপলাইনে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হওয়ায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল বলে মন্ত্রণালয় বলছে। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এভাবে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়াকে ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
গতরাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার খবর আসতে থাকে।
মহাখালী, মগবাজার, ইস্কাটন, রামপুরা, রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, বাড্ডা, হাজারীবাগ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, হাজারীবাগের বাসিন্দারা গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার তথ্য জানান।
এই সময় বিভিন্ন এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে চুলা না ধরানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
তবে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বিবিসি মহাখালী, রামপুরা, ক্রিসেন্ট রোড, মগবাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, সেসব এলাকায় গ্যাসের গন্ধ এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।
বিভিন্ন এলাকায় রাতভর উদ্বেগ
মহাখালীর চ ব্লকের বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, রাত ৮টার পর থেকেই এলাকায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘ভয়ে আমরা সবাই নিজেদের বাসার রাইজার (গ্যাসের সুইচ) বন্ধ করে রেখেছি। আশেপাশের বাড়ির সবাইকেও বন্ধ করে রাখার জন্য বলেছি। এরপর আর আমরা কেউ চুলা ধরাইনি।’
রামপুরার বাসিন্দা আবু জাফর বলছেন, ‘গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার পরেই আমরা ৯৯৯, ফায়ার সার্ভিস আর থানায় খবর দিয়েছি।’
তিতাসের অফিসেরও যোগাযোগ করেছি, কিন্তু সেখানে কেউ ফোন ধরে না। আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে আছি।
এসময় সামাজিক মাধ্যমে অনেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার তথ্য দিয়ে পোস্ট করেন।
এ তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর মহাখালী, রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি।
একজন কর্মকর্তা রাত ২টার দিকে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা এখানে রয়েছি। তবে কোথাও এখনো কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’
ফায়ার সার্ভিসের কন্টোল রুম থেকে জানা গেছে, সোমবার মধ্যরাত থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার খবরে তারা শতাধিক টেলিফোন কল পেয়েছেন।
যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে মন্ত্রণালয়
বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার খবরের পর সোমবার মধ্যরাতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পাতায় পোস্ট দিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘ঈদে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায়, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় (ওভার-ফ্লো) গন্ধ বাইরে আসছে।’
এই বিষয়ে নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘তিতাসের জরুরি ও টেকনিক্যাল টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’
এর কিছু পরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় একটি পোস্ট দিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ লিখেছেন, ‘ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গাতে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার খবরে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘ঢাকার গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা যা বলা বলছেন
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে ঢাকার অনেক এলাকায় প্রবল মাত্রায় গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে, তা একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘বোঝা যাচ্ছে, পাইপলাইনগুলোর ভেতরে অনেক ছিদ্র আছে। কিন্তু সেটা তো থাকার কথা নয়।’
‘হয়তো স্বাভাবিক সময়ে চাপ কম থাকায় এটা টের পাওয়া যায় না। কিন্তু এখন চাপ বেশি হওয়ায় বিষয়টা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলছেন, পাইপলাইনে গ্যাস লিকেজ বিপজ্জনক একটা বিষয়।
‘কারণ এতে অনেক স্থানে গ্যাস জমে থাকার একটা ঝুঁকি তৈরি হয়, যেটা পরবর্তীতে বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে,’ বলেছেন অধ্যাপক ইমাম।
সূত্র : বিবিসি