দিল্লিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে দিল্লিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। সংঘর্ষে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গুলিবিদ্ধসহ ২৫০ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন।
দিল্লি হাইকোর্ট বুধবার পুলিশকে আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। বিচারপতি এস মুরালিধর ও বিচারপতি তালবন্ত সিংয়ের বেঞ্চ জাতীয় রাজধানীতে সহিংসতা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া একই দিন দুপুরে জবাব চেয়ে দিল্লি পুলিশ কমিশনারকে নোটিশ জারি করেছে।
ওই সময় নাগরিকত্ব আইনে দাঙ্গা এবং জনতার আক্রমণে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য বিজেপির তিন নেতা- অনুরাগ ঠাকুর, পার্বেশ সাহেব সিংহ এবং কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে বিচারিক তদন্ত ও এফআইআর নিবন্ধনের আবেদনের শুনানি চলছিল।
মঙ্গলবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর ৬৭টি সংস্থা ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সহিংসতার জন্য প্রায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। শ্যুট-এট-দ্য অর্ডার জারি করা হয়েছে।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে সেনাবাহিনীকে ‘উদ্বেগজনক’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দিল্লি পুলিশ ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম’।
বধবারেও দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মৌজপুরে এদিন এক সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত চার সাংবাদিক। অনেক সাংবাদিকের কাছে ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়ে তাদের হেনস্তা করেছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার রাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। দেখা করেন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। অজিত ডোভাল সিলামপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুর, গোকুলপুরী চক প্রভৃতি জায়গা ঘুরে দেখেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে।
ওই দিন রাতে জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবাগ, কারওয়াল নগরে ১৪৪ ধারা জারি করে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনের দাবি উঠেছিল। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, যথেষ্ট সিআরপি নামানো হয়েছে। এখনই সেনা ডাকার দরকার নেই।
পরিস্থিতি সামলাতে গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। দিল্লি-সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদেও ১৪৪ ধারা জারি হয়। নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয় গাজিয়াবাদ-দিল্লির সীমানায় যাতায়াতের উপর। টানা বন্ধ দু’দিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির পাঁচটি মেট্রো স্টেশন। সংঘর্ষের ছবি না-দেখানোর পরামর্শ দেয়া হয় বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে।
কিন্তু অশান্তি থেমে থাকেনি। সংঘর্ষ পাথর-যুদ্ধ, গুলি, ভিড় জমিয়ে মারধর, অসংখ্য বাড়ি-দোকানে আগুন লাগানো, লুঠতরাজ- কিছুই বাকি থাকেনি। উত্তর-পূর্ব দিল্লির আকাশে সারা দিনই কালো ধোঁয়া পাকিয়ে পাকিয়ে উঠেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল কর্মীরাই আক্রান্ত হয়েছেন। (সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)