ব্রুকলিনের চার্চ এভিনিউতে প্রায় ত্রিশ হাজার বাংলাদেশির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বর্ণাঢ্য পথমেলা। রোববার আমেরিকা বাংলাদেশ ফ্রেণ্ডশীপ সোসাইটি আয়োজিত মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রিয় ব্যক্তিত্ব, মানবসেবায় প্রেসিডেন্টের আজীবন সম্মাননা স্বর্ণপদক প্রাপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশিরা তাদের নিজস্ব শক্তি, চেতনা আর ভালোবাসা নিয়ে এই আমেরিকায় অসামান্য সাফল্যের দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছেন। মূলধারার রাজনীতি থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই তারা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ঢেউ তুলছি। এই ঢেউ অন্য জাতিগোষ্ঠির জন্য অনুকরণীয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কের মাইমনিডিস হসপিটালের ভাইস প্রেসিডেন্ট জবলাস ডগলাস, এনওয়াইপিডি’র ৬৬ প্রিসিংক্ট কমাণ্ডিং ইনচার্জ ডগলাস মোডি, আমেরিকা বাংলাদেশ ফ্রেণ্ডশীপ সোসাইটির সভাপতি কাজী আযম, সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরী, ফিরোজ আহমেদ, এস এম ফেরদৌসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সুধীবৃন্দ।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে আটটা অবধি মেলায় ছিল বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের স্টল। মেলায় বিভিন্ন পর্যায়ে মুলধারার জনপ্রতিনিধিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হন। এদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কের ৩৯ ডিস্ট্রিক্ট এর কাউন্সিল উইমেন শাহানা হানিফ, এটর্নী মইন চৌধুরী, আজকাল পত্রিকার সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, ব্রুকলীন সাউথ কমিউনিটি এফেয়ার্সের কমাণ্ডিং অফিসার লুথার্ন আইরা জিলান, ব্রুকলীন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি
এরিক গনজালেস, সাউথ এশিয়ান কমিউনিটি লিয়াজোঁ লু লু।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমাদের মধ্যকার এই ঢেউ ভালোবাসার, এই ঢেউ আমাদের ঐক্যবদ্ধতার। এটি শুধু বাঙালি জাতির জন্য নয়। আমেরিকান বাংলাদেশিদের জন্য গৌরবের একটি মাইলফলক আমরা তৈরি করছি। আমরা সব জাতির মাঝে জানাচ্ছি আমরাই একটি শক্তি। আমরাই সারা পৃথিবীর নেতৃত্বের অংশীদার।
আবু জাফর মাহমুদ তার হোম কেয়ার অভিযানের সূচনাক্ষেত্র ব্রুকলিনের এই বিশাল মেলায় উল্লেখ করেন, কেয়ারের কাজ করতে গিয়ে এখানে ভালোবাসার কাজ করছি। আমরা আমাদের পরিবার থেকে যে ভালোবাসা দেখে এসেছি, তাই আমরা আমেরিকান সমাজে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যখন বাংলাদেশি আমেরিকান তখন আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সত্তা, আমাদের স্বকীয়তা এগুলো বাদ দিয়ে আমরা আমেরিকান হইনি। অন্যরা যেমন একা হতে হতে পিতৃ পরিচয়ও হারিয়ে ফেলছে ওই সমাজ আমাদের নয়। আমরা ভালোবাসার সরোবরে সাঁতার দিতে, ভালোবাসার মধ্যে থাকতেই জন্ম নিয়েছি। তিনি তার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতি প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের মানুষের জন্য আমরা ‘কাচারি ঘর’ করেছি। এই ‘কাঁচারি ঘর’ শুধু বাংলাদেশে আছে, অন্য কোথাও নেই। এখানে যেমন ৫৪৪ ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে কাঁচারিঘর করেছি, একইভাবে কাঁচারিঘর করেছি ১১২৭ লিবার্টি এভিনিউ ওজোন পার্কে, আরো দুটি কাঁচারিঘর নেয়া হয়েছে ১৪৭-১৪ হিল সাইড এভিনিউ, জ্যামাইকা ও ১৯৮-১২ হিলসাইড এভিনিউ হলিসে। এগুলো করা হয়েছে বাঙালির ঐতিহ্য আমেরিকানদের মাঝে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি। আমরা কাঁচারিঘরে বসে চা কফি খাই। আমরা আমাদের সামাজিকতার চর্চা করি। আমি এই কাজটির মধ্যে আমি নিজে থাকছি, অন্যদের শেখাচ্ছি। আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা আজ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। তিনি উপস্থিত সবাইকে আমন্ত্রণ জানান, বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের অফিসে “কাঁচারি ঘর” এ।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, হোম কেয়ার অনেকেই করছে। এটি একটি ব্যবসা। প্রচুর লোকই ব্যবসা করে। আমার আর অন্যদের মধ্যে পার্থক্য কি? আমি বলি, ভালোবাসা ছাড়া কোনোদিন যত্ন হয় না। এই যত্নসহ ভালোবাসার একটি আলাদা শক্তি। এই আলো যখন একটি আন্ধকারে থাকা দুয়েকজনের গায়ে লাগে সেখানে একটু ঈর্ষা থাকবেই। তাদের মনের মঝে কষ্ট থাকবেই। এটিই প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা করতে করতে আজ যে জায়গায় এসেছি, সেখানে দাঁড়িয়ে স্পষ্টই দেখতে পাই, আমাদের বিজয় অবধারিত। তিনি বিশ্ব মা দিবসে থাউজেন্ডস শেডস অফ উইমেন কর্তৃক বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস এ- অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের সবচেয়ে সবচেয়ে পুরনো কর্মকর্তা ম্যানেজার শিউলি বেগম ও ইনটেক ম্যানেজার কানিজ সুলতানা বিশেষ সম্মানে ভূষিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা বাংলাদেশিরা আজ আমেরিকার রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে গেছি। আমাদের মেয়ে শাহানা হানিফ এখানে কাউন্সিলওমেন। আমরা সবাই আজ আনন্দিত ও স্পন্দিত যে আমাদের ভেতর থেকে একজন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে কথা বলছে। শাহানা হানিফ বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা। সে যতদূর যাচ্ছে ততদূর আমরা যাচ্ছি। সে আমাদের গৌরব। শাহানা যতবার প্রতিযোগিতা করছে, আমরা তার সঙ্গে আছি। সে যেখানে যাচ্ছে আমাদের কথা বলছে।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে আটটা অবধি মেলায় ছিল বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের স্টল। মেলায় বিভিন্ন পর্যায়ে মুলধারার জনপ্রতিনিধিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হন। এদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কের ৩৯ ডিস্ট্রিক্ট এর কাউন্সিল উইমেন শাহানা হানিফ, ব্রুকলীন সাউথ কমিউনিটি এফেয়ার্সের কমাণ্ডিং অফিসার লুথার্ন আইরা জিলান, ব্রুকলীনজ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এরিক গনজালেস, সাউথ এশিয়ান কমিউনিটি লিয়াজোঁ লু লুই প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে ছিল বিরামহীন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশি কমিউনিটির সুপরিচিত সব শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশ করেন। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি, শাহ্ মাহবুব, ত্রিনিয়া হাসান, উম্মে জান্নাতুল ফেরদৌস বাঁধন।
এ জাতীয় আরো খবর..