উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল আরএসএস-কে আক্রমণ শানিয়ে থাকেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সেই রাহুলকেই আমেরিকায় প্রশ্ন করা হয়েছিল কেরলে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী মুসলিম লিগকে নিয়ে। আর তাতে রাহুলের দাবি, মুসলিম লিগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল। আর রাহুলের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছে বিজেপি।
উল্লেখ্য, আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন রাহুল। সেখানেই কেরলে মুসলিম লিগের সাথে কংগ্রেসের জোট নিয়ে একটি প্রশ্ন করা হয় তাকে। ওই প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, ‘মুসলিম লিগ সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ দল। মুসলিম লিগের কোনো কার্যকলাপই ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে নয়। আমি মনে করি যে ব্যক্তি প্রশ্নটা পাঠিয়েছেন তিনি মুসলিম লিগ নিয়ে পড়াশোনা করেননি।’
উল্লেখ্য, বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থার অভিযোগ তোলা কংগ্রেস নিজেও একাধিক কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দলের সাথে হাত মিলিয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে। এর আগে মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সাথে হাত মিলিয়ে সরকরে ছিল কংগ্রেস। কেরলে বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে বাম বিরোধী ‘ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটির ফ্রন্টে’ মুসলিম লিগের সাথে জোট বেঁধে লড়ছে কংগ্রেস। এই আবহে মুসলিম লিগকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ আখ্যা দেয়ায় রাহুলের তীব্র সমালোচনা করে বিজেপি অভিযোগ করেছে, ভোট-রাজনীতির স্বার্থেই এহেন মন্তব্য তার।
এ নিয়ে বিজেপি আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য একটি টুইট করে লেখেন, ‘ভারত ভাগের জন্য দায়ী জিন্নার দল মুসলিম লিগকে ধর্মনিরপেক্ষ বলেছেন রাহুল। ওয়েনাড়ে ভোটে জেতার বাধ্যবাধকতা থেকেই তিনি এহেন মন্তব্য করেছেন।’
এদিকে অমিতের সেই টুইটের জবাবে কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতে কটাক্ষ করেন, ‘রাত জেগে আরও কিছুদিন রাহুল গান্ধীর বিদেশ যাত্রা ট্র্যাক করতে থাকুন।’
এদিকে অমিত মালব্যর টুইটের জবাব দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা পবন খেরাও। তিনি টুইট করে লেখেন, ‘ভাই তুমি কি অশিক্ষিত? জিন্নার মুসলিম লিগ এবং কেরলের মুসলিম লিগ যে আলাদা, তা তুমি জানো না? জিন্নার মুসলিম লিগ হলো সেই দল, যার সাথে তোমাদের পূর্বপুরুষরা জোট বেঁধেছিল। আর এই মুসলিম লিগ হলো যাদের সাথে বিজেপি জোট বেঁধেছিল।’
উল্লেখ্য, কেরলের মুসলিম লিগের পুরো নাম- ‘ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ’। এটি একটি রাজ্য দল। যেমন বিজেপির পূর্বসূরি জনসংঘ, তেমনই আইইউএমএল-এর পূর্বসূরি জিন্নার মুসলিম লিগ। তবে এই দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এই দলের সদর দফতর চেন্নাইতে। একাধিকবার এই দল ভেঙেছে, নতুন গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। তবে এরা প্রথম থেকেই ভারতীয় সংবিধান মেনে রাজনৈতিক ময়দানে লড়াই করেছ। এই আইইউএমএল-এর সাথে ২০১২ সালে নাগপুর পুর নির্বাচনের পর মুসলিম লিগের দুই কাউন্সিলরকে নিয়ে বোর্ড গঠন করেছিল বিজেপি।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস