সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

নিউইয়র্কের সাবওয়েতে অপরাধ বৃদ্ধি : জনমনে ভীতি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০
  • ৩০২ বার

নিউইয়র্কের সাবওয়েতে (পাতাল রেল) অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জনমনে চরম ভীতি বিরাজ করছে। গত দুই মাসে (জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী) সিটির অন্তত ৯৭ এলাকায় ১৩২টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই তথ্য জানিয়েছেন এমটিএ’র চীফ অব ট্রানজিট এডওয়ার্ড ডিলাটরী। এদিকে সম্প্রতি ব্রুকলীনে একাধিক ছিনতাই ও হামলার ঘটনার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারী বুধবার আরো এক বাংলাদেশী কুইন্সের পার্সন্স বুলেভার্ডে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে হামলার শিকার হয়েছে। তার নাম স্বপন মির্জা। এই হামলার বিষয়ে বাংলাদেশী আমেরিকান বিজনেস অ্যালায়েন্স (বিএবিএ)-এর পক্ষ থেকে আমজাদ হোসেন সেলিম স্থানীয় পুলিশ প্রিসেঙ্কটে অভিযোগ করে সংশ্লিস্ট অফিসারের সাথে মতবিনিময় করেছেন।
এমটিএ সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইকারীদের মধ্যে শতকরা ৪৪জনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অতীত অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ১৮ বছর বয়সের নীচে। সংশ্লিস্টরা এই অপরাধকে ‘ইয়্যুথ অন ইয়্যুথ ক্রাইম’ ও ছিনতাইয়ের অপরাধগুলোকে ‘জুভেনীল ক্রাইম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সূত্র মতে সিটির মানহাটান, কুইন্স, ব্রুকলীন আর ব্রঙ্কসে সাবওয়েতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এবং এর মধ্যে ম্যানহাটান ও ব্রুকলীনে এই অপরাধের ঘটনা বেশী ঘটছে। এজন্য সেখানে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার ডারমোট সিয়া সিটিতে এই অপরাধের কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘ইয়্যুথ অন ইয়্যুথ ক্রাইম’ সম্পর্কে তিনি অবগত এবং ম্যানহাটান ও ব্রঙ্কসে ‘জুভেনীল ক্রাইম’ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অপরাধ দমনে সিটিতে ৩০০ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার ডারমোট সিয়া বলেছেন, ইয়াংদের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে ক্রিমিনাল জাস্টিস ব্যবস্থার সাথে কাজ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও পুলিশ কাজ করছে।
অপরদিকে সাংবাদিক এম সোলায়মান গত ২০ ফেব্রুয়ারীর তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ফেসবুকে বলেছেন: ‘ট্রেনের অপর প্রান্তে থেকে অন্য এক কালো যুবক চিৎকার করে বলতে থাকলো ডোন্ট ডু ইট’, সে দৌড়ে এসে তাকে প্রতিরোধ করলো। তাকে জোর করে অন্য বগিতে পাঠিয়ে দিলো। ওই যুব টি নেমে যাবার পর আবারো সে এই বগিতে এসে আমার দিকে তেড়ে আসলো। এরই মাঝে ট্রেন একটি স্টেশনে থামলো। আমি সুযোগ বুঝে মানুষের ফাকে নেমে অন্য ট্রেনে উঠে পড়লাম। কালো ড্রাংক লোকটি বার বার কেন আমাকেই টার্গেট করছিলো। লোকটি কেনইবা আমার মুখের উপর ঘুসি মারতে চাইছিলো জানি না। আমার সাহায্যে এগিয়ে আসা যুবকটি নেমে যাবার আগে আমাকে বললো কেন আমি প্রতিবাদ করছিনা। অথচ ট্রেন ভর্তি মানুষ।। আজ (২০ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস থেকে ব্রুকলীন চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে যেতে এফ ট্রেনে এই ঘটনা। আল্লাহর রহমতে রক্ষা পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ মহান। এখন বুঝতে পারছি আজ ভোর ৫ টায় দেশ থেকে হঠাৎ মায়ের ফোন। বাবা সাবধানে থাকিস। এর আগে আমার মা কখনো এত ভোরে ফোন করেননি। পশু পাখি না জানিতেই আগে জানে মা।। তাই তো তিনি মা। এত দিন নিউইয়র্কে এসব ঘটনার নিউজ করছিলাম। আজ নিজেই বাস্তবতায়।’
বাফেলোয় সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি কমিউনিটিতে উদ্বেগ
এদিকে বাফেলো থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো প্রবাসী বাংলাদেশীদের নতুন ঠিকানা হিসেবে গড়ে উঠছে। নাগরিক কোলাহল থেকে অনেকটা মুক্ত, শান্ত এই জনপদ। জনসংখ্যার হিসেবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ নগর হচ্ছে বাফেলো।
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে নায়াগ্রা জলপ্রপাত। এর অদূরে এই বাফেলো নগরের অবস্থান। কানাডার সঙ্গে আমেরিকার সীমান্তও সেখানেই। কানাডার দিক থেকে সে দেশটির অন্যতম বড় শহর টরন্টো থেকে নায়াগ্রা নগর তথা বাফেলো দেড় থেকে দুই ঘণ্টার ড্রাইভিং দূরত্বে।
বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন অভিবাসীদের কাছে আবাসন ব্যয় ও অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী বলে পরিচিত এই শহরে। তবে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) প্রকাশিত সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান এখানকার কমিউনিটিতে বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এফবিআই প্রতি বছরই আমেরিকাজুড়ে ঘটে যাওয়া অপরাধের বিভিন্ন পরিসংখ্যান বের করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এফবিআই নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ঘটে যাওয়া অপরাধের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এফবিআই প্রকাশিত এই তালিকায় নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ২০২০ সালের বিপজ্জনক শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে উঠে এসেছে বাফেলোর নাম।
২০১৯ সালে এফবিআই থেকে প্রকাশিত একই তালিকায় বাফেলো দ্বিতীয় স্থানে ছিল। প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার বাসিন্দা নিয়ে অনেকটা শান্তশিষ্ট এই শহর অপরাধ প্রবণতার দিক দিয়ে ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অন্যান্য শহরের চেয়ে এগিয়ে ছিল। প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে ঘটে যাওয়া অপরাধের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২টি। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত।
সম্প্রতি বাফেলোর বেশ কিছু বাংলাদেশী দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। এ নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় প্রবাসীরা। বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জরুরি বৈঠক, সভা করে কীভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা যায়Íতা নিয়ে আলোচনা করেন। পুলিশসহ নগরের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যাপারে আলাপ করেন।
পুলিশ ও সিটি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী কমিউনিটির সবাইকে বাসাবাড়ি, অফিসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে। তা ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পেট্রল পুলিশে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে কমিউনিটি নেতা ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com