এক দিকে দিল্লির সাম্প্রতিক মুসলিম গণহত্যা ও সম্প্রদায়িক দাঙ্গা। অন্যদিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ইস্যু। আন্তর্জাতিক স্তরে বিষয়গুলো নিয়ে চাপ বাড়ছে ভারতের ওপর। পরিস্থিতি এমনই যে, প্রায় প্রতিদিনই একবার করে বিবৃতি দিতে হচ্ছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা অথবা কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকেও দিল্রিকে বারবার বোঝাতে হচ্ছে নিজেদের অবস্থান। বৃহস্পতিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই সঙ্গে নতুন করে চাপ বাড়িয়েছেন ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি। টুইট করে দিল্লির মুসলিম গণহত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি।
মঙ্গলবারই জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার সিএএ-বিরোধী মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে শামিল হতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আগের দিনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে দাবি করেছেন, বিষয়টি একান্ত ভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ। অথচ দু’দিন আগেই সিএএ আইনের খসড়া ফাইলগুলো দেখতে চেয়ে তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন এক সাংবাদিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়, সেগুলো দেখানো যাবে না, কারণ তাতে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবারও দাবি করেছে যে, সিএএ প্রশ্নে কোনো তৃতীয়পক্ষের নাক গলানোর অধিকার নেই। কিন্তু ঘটনা হল, ইতালির এবং একবার স্পেনের মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত মামলায় এর আগে শামিল হয়েছে জাতিসঙ্ঘ। সেসময় জাতিসঙ্ঘের কথা শুনে সংশ্লিষ্ট সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিয়েছে।
সিএএ-র পাশাপাশি দিল্লিতে সাম্প্রতিক মুসলিম গণহত্যা নিয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে পড়েছে মোদি সরকার। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খোমেনি টুইট করে জানিয়েছেন,‘ভারতে মুসলমানদের উপর গণহত্যা ও অত্যাচারের ঘটনায় গোটা বিশ্বের মুসলিম সমাজ শোকগ্রস্ত। ভারত সরকারের উচিত চরমপন্থী হিন্দুদের মোকাবিলা করা। ইসলামি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না চাইলে, ভারতের উচিত এই অত্যাচার বন্ধ করা।’
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও দিল্লির ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন। নিন্দা এসেছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকেও। বৃহস্পতিবার এসবের মোকাবিলায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন,‘আমরা দেখেছি দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করা হয়েছে। পরিস্থিতি খুব দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তি এবং সম্প্রিতির আবেদন করেছেন। এমন স্পর্শকাতর সময়ে এমন সমালোচনা না করার জন্যই আবেদন করছি।’ সূত্র : আনন্দবাজার