রাশিয়ায় ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসানের একদিন পর দেশটির সরকারি টিভিতে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে দেখা গেছে। সংবাদদাতারা বলছেন, পুতিন ও তার সরকার যে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে করে যাচ্ছেন এমন একটা চিত্রই তুলে ধরা হচ্ছে।
ক্রেমলিন সোমবার (২৬ জুন) ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ভিডিও বক্তৃতা অনলাইনে পোস্ট করে।
ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসান এবং এই গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের রাশিয়া ত্যাগের পর এই প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কোনো ভিডিওতে দেখা গেল।
এতে একটি যুব শিল্প ফোরামে আগত অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে রুশ প্রেসিডেন্টকে ভাষণ দিতে দেখা যায়। এতে তিনি ওয়াগনার গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলীর কোনো উল্লেখ করেননি।
তবে ভাষণটি কখন রেকর্ড করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট পুতিন সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রইসির সাথে ফোনে কথা বলেছেন বলে ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে ওয়াগনার বিদ্রোহের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট রুশ নেতৃত্বের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে যে শহরটি ছিল ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহী তৎপরতার কেন্দ্র – সেই রোস্তভ-অন-ডনে ঐক্যের ডাক ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
টেলিগ্রামে স্থানীয় একটি চ্যানেলে এসব পোস্টারের ছবি দেখা যায়।
সরকারি টিভিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু
ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ অবসান এবং এই গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের রাশিয়া ত্যাগের পর সোমবার প্রথমবারের মতো শোইগুকেও টিভিতে দেখা গেছে।
শোইগুকে ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সৈন্যদের পরিদর্শন করতে দেখা যায়, তবে কখন এবং কোথায় এসব ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তার কোনো আভাস দেয়া হয়নি।
ওই বিদ্রোহের সময় শোইগুকে ‘অশুভ’ বলে আখ্যায়িত করে তাকে তার পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন প্রিগোজিন।
বিবিসির সংবাদদাতা কেলিন ডেভলিন বলেন, শোইগুর এ সফর যখনই হয়ে থাকুক, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে শোইগু স্বপদে বহাল আছেন।
ইতোমধ্যে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন বলেছেন, রাশিয়ার ‘স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন’ এবং দেশকে অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পেছনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এই ঘটনাবলীর পর রুশ মুদ্রা রুবলের মূল্যমান গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যায়। তবে কিছুক্ষণ আগে তার দর ডলারের বিপরীতে ৮৭.২৩০০ থেকে দুই শতাংশ বেড়েছে।
প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে তদন্ত
অন্যদিকে ওয়াগনার বিদ্রোহে নেতৃত্ব দানকারী প্রিগোজিন বেলারুশ চলে গেছেন বলে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হলেও তাকে এখন পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি, এবং তিনি এ পর্যন্ত কোনো কথাও বলেননি।
প্রিগোজিনের রাশিয়া ছাড়ার আগে শনিবার তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার এবং ‘এক সমঝোতার’ খবর পাওয়া গেলেও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে। তবে এর অর্থ কি তা স্পষ্ট নয়।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে ফেডারেল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান তদন্ত করছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে ‘ফাটল’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বলেছে যে এই বিদ্রোহ ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি এক সরাসরি চ্যালেঞ্জ এবং এতে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ‘তার নেতৃত্বে ফাটল ধরেছে’।
ন্যাটো জোটের মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপের ব্যর্থ অভ্যুত্থান আরো একবার দেখিয়ে দিয়েছে যে পুতিন ইউক্রেনে ‘অভিযান’ চালিয়ে এক বড় ভুল করেছেন।
ওয়াগনারের বিদ্রোহের ব্যাপারে চীন এ কয়েকদিন নিরব থাকলেও গত রাতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছে।
এতে বলা হয়, যা ঘটেছে তা ‘রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়’।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার ‘বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী’ এবং অংশীদার হিসেবে চীন রাশিয়াকে তার ‘জাতীয় স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রয়াসে’ সমর্থন দেয়।
সূত্র : বিবিসি