আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পেতে নানা শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। আইএমএফ থেকে বলা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পরিমাণ রিজার্ভ দেখাচ্ছে তা সঠিক নয়। প্রকৃত রিজার্ভ আরো কম। তাই জুড়ে দেয়া আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা করতে হবে।
আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা শুরু করেছে। আর এতেই প্রকৃত রিজার্ভ ৬৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার কমে গেছে। প্রকৃত রিজার্ভ কমে নেমেছে সাড়ে ২৩ বিলিয়ন ডলারের কাছে (২ হাজার ৩৫৬ কোটি ডলার)।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাশাপাশি সমন্বিত রিজার্ভ দেখানো হয়েছে ৯ হাজার ৯৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে আন্তঃব্যাংকের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ডলারের দর অভিন্ন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবত আন্তঃব্যাংকে ডলার দাম ১০৯ টাকা উঠে গেছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের আমদানি ব্যয়ও বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছিল সংস্থাটি। যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানে করতে হবে। আর এটা করতে বলা হয়েছিল গত জুন থেকে। বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পরিমাণ রিজার্ভ দেখাচ্ছে প্রকৃত রিজার্ভ তার চেয়েও কম। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করেছে রিজার্ভ থেকে। এ তহবিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার, যা ব্যবসায়ীদের মাঝে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল আকারে বিনিয়োগ করেছে। আইএমএফ বলছে, যেহেতু এ অর্থ ব্যবহার হয়ে গেছে, তাই রিজার্ভ থেকে এ অর্থ বাদ দিতে হবে।
আবার রিজার্ভের অর্থ থেকে লং টার্ম ফান্ড নামক একটি তহবিল (এলটিএফ) গঠন করা হয়েছে। এ অর্থও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল আকারে ব্যবসায়ীদের মাঝ বিতরণ করা হয়েছে। আইএমএফ বলেছিল, এ অর্থও বাদ দিতে হবে রিজার্ভ থেকে। তেমনিভাবে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে দেয়া অর্থ এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে রিজার্ভ থেকে দেয়া অর্থ বাদ দিতে হবে। প্রকৃত রিজার্ভ হিসাব করতে এসব অর্থ বাদ দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে সম্মত হয়েছিল। ইতোমধ্যে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব করতে ইডিএফ বিকল্প ১০ হাজার কোটি টাকার আরেকটি তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যদিও এ তহবিল স্থানীয় মুদ্রায় গঠন করায় ব্যবসায়ীরা তা ব্যবহার করছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সূত্র জানিয়েছে, সমন্বিত রিজার্ভ থেকে ইডিএফ, জিটিএফ, এলটিএফ, বিমান ও পায়রা বন্দরের বাবনাবাদ চানেল খনন করার জন্য ধার দেয়া অর্থসহ মোট ৬৪০ কোটি ডলার বাদ দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রকৃত হিসাব সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরী করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার সমন্বিত হিসাব দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। এ থেকে ৬৪০ কোটি ডলার বাদ দেয়া হয়েছে। আর এতে প্রকৃত রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারে।