অপরাধের শিকার হওয়ার ভয়ে কাঁপছে নিউইয়র্কের বাসিন্দারা। নিরাপত্তা নিয়ে এমন ভয় আগে কখনোই ছিল না তাদের মধ্যে। নগরীর বেশির ভাগ লোকের মধ্যে এই আতঙ্ক ঢুকে গেছে যে তিনিই হবেন পরবর্তী শিকার। নতুন এক জরিপে এই ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে।
সিনা কলেজের ওই জরিপে এম্পায়ার স্টেটের প্রায় ৬১ ভাগ অধিবাসী স্বীকার করেছেন যে তারাই কোনো না কোনোভাবে পরবর্তী অপরাধের শিকার হবেন। আর বিগ অ্যাপেলের ৭০ ভাগ লোক আশঙ্কা করছেন যে তারা হবেন অপরাধের পরবর্তী শিকার।
এদিকে নিউইয়র্কের ৮৭ ভাগ মনে করেন, অপরাধ একটি মারাত্মক সমস্যা। মাত্র ১১ ভাগ একে তেমন বড় কোনো সমস্যা মনে করেন না।
সিনা কলেজের জরিপ পরিচালক ডন লেভি বলেন, ‘নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মনে করেন যে অপরাধ দূরের কারো ওপর নেমে আসে না।’
তিনি বলেন, ‘৮৭ ভাগ মনে করেন, আমাদের রাজ্যে অপরাধ একটি মারাত্মক সমস্যা। আর ৫৭ ভাগ বলছেন যে এটি তাদের কমিউনিটির সমস্যা। আর ৬১ ভাগ বলেন, এখানে যা ঘটছে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই পাবলিক প্লেসগুলোতে নিজেদের কিংবা তাদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, তাদের সুরক্ষার জন্য তারা যেটাকে সর্বোত্তম পদক্ষেপ মনে করেন, সেটাই গ্রহণ করেন।’
জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১০ নিউইয়র্কারের একজন বলেছেন যে তারা গত বছর শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা চুরির শিকার হয়েছেন।
অনেক ব্যক্তি সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজের হাতে গ্রহণ করেছেন। তারা আত্মরক্ষার জন্য সিকিউরিটি ক্যামেরা কিনছেন, কিংবা পেপার স্প্রে ও আগ্নেয়াস্ত্রের মতো যন্ত্র কিনছেন।
জরিপে দেখা যায়, নাগরিকদের ৪০ ভাগ নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য ১০০ ডলারের বেশি দামের পণ্য বা পরিষেবা ক্রয় করেছেন। ৩৪ ভাগ লোক তাদের বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পেশাদার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় নয়- এমন সিকিউরিটি ক্যামেরা কিনেছেন।
সমাজকর্মী চালর্স অ্যাডামস স্বীকার করেছেন যে এই পরিসংখ্যানের অংশ তিনিও। প্রতিদিন কানেকটিকাট থেকে বিগ অ্যাপেলে যাতায়াতকারী অ্যাডামস জানান, ‘বিষয়টি ভয়াবহ। আমি আগের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। নগরীতে আমি নিরাপদ অনুভব করি না। একেবারেই না।’
স্বাস্থ্য পরিচর্যাকর্মী ৫৭ বছর বয়স্কা রেনিটা ম্যারিনা বলেন, তিনিও আতঙ্কিত। তিনি এখন রাস্তায় বা সাবওয়েতে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বেশ বয়স্ক। তাই সত্যিই আতঙ্কিত। তবে তুমি ভ্রমণ করতে পারো, তুমি কাজে যেতে পারো, তুমি খেতে পারো, তুমি বাইরে বের হতো পারো, তুমি দৈনন্দিন জীবনে যেভাবে খুশি চলতে পারো। তুমি যা চাও তাই করতে পারো।’
তিনি বলেন, ‘তবে সবকিছুর মধ্যেই অপরাধের কথা মাথায় থাকে। তুমি যে শিকার হবে না, তা আমি বলতে পারি না।’
বিগ অ্যাপেলের হিসাব অনুযায়ী, গত মাসে অপরাধ ৪ ভাগ কমেছে। তবে এনওয়াইপিডির তথ্যানুযায়ী, সার্বিকভাবে অপরাধ কমলেও গাড়ি চুরি ২৩ ভাগ বেড়েছে।
এ ব্যাপারে মেয়র এরিক অ্যাডামস জোর দিয়ে বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে ‘ভয়াবহ ঘটনা’ জানার পর নিউইয়র্কের লোকজন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করি। তারা কিভাবে তাদের দিন শুরু করে? তারা দিন শুরু করে খবর বাছাই করে- তারা সকালের পত্রিকা পড়ে, তারা আগের দিনে হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর কয়েকটি দেখে। এটা তাদের মনে প্রভাব বিস্তার করে।’
সিনা জানিয়েছে, তারা ৪ থেকে ১২ জুন জরিপটি পরিচালনা করেছিল। এতে নিউইয়র্কের ৮০২ জন বাসিন্দা অংশ নেয়।