উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) দেশগুলো এখন ভারতীয় প্রবাসীদের অন্যতম গন্তব্য। সেখানে বর্তমানে প্রায় নয় মিলিয়ন ভারতীয় প্রবাসী কর্মরত রয়েছে। এতে ‘গাল্ফ মাইগ্রেশন করিডোর’ এখন বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম স্থানে পরিণত হয়েছে।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় শ্রমিকদের উপসাগরে অভিবাসন ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭০-এর দশকে তেলের বুমের পর তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের কর্মশক্তিতে বিদেশীদের যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এতে কয়েক দশকে নতুনদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে ভারতীয় প্রবাসীদের সংখ্যা ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন, যা প্রবাসী ভারতীয়দের ৬৬ ভাগেরও বেশি।
তথ্য অধিকার আইন ২০০৫-এর অধীনে নাগপুরের নাগরিকরা পরিসংখ্যানগুলো প্রকাশ্যে আনার দাবি জানায়। তখন স্থানীয় মিডিয়াতে ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরটিআইয়ের উত্তরে মন্ত্রণালয় বলেছে যে আনুমানিক ১০ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন এনআরআই ২১০টি দেশে বাস করে। তাদের মধ্যে ৩ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ইউএইতে, ২ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন সৌদি আরবে, ১ দশমিক ০২ মিলিয়ন কুয়েতে, সাত লাখ ৪০ হাজার কাতারে, সাত লাখ ওমানে ও তিন লাখ ২০ বাহরাইনে আছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে, এনআরআইদের সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ দশমিক ২৮ মিলিয়ন এবং যুক্তরাজ্যে তিন লাখ ৫০ হাজার।
নয়া দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ মুদ্দাসসির কামার বলেছেন, ‘ভারতীয়রা উপসাগরীয় বাজারে কর্মসংস্থানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে সেখানে তেল শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। একইসাথে অর্থনৈতিক বৈচিত্র রয়েছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘ভারত ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্কও ভারত-গাল্ফ মাইগ্রেশন করিডোরকে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম স্থানে পরিণত করেছে।’
ভারতীয় প্রবাসীদের আকৃষ্ট করার প্রধান কারণ হলো, পারিশ্রমিক ভালো। আবার ভৌগলিকভাবেও নিকটবর্তী, যা মধ্যপ্রাচ্যকে তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক গন্তব্য করে তুলেছে। অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ ও চাকরি জাতীয়করণের কারণে উপসাগরে চলমান বাজারের পরিবর্তন সত্ত্বেও যেকোনো সময় শিগগির পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার কারণে উপসাগরীয় নিয়োগকর্তারা ভারতীয় কর্মীদের পছন্দ করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘উপসাগরীয় বাজারে এই ধরনের শ্রমিকদের চাহিদা স্থির থাকবে এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে ভারতীয়দের ক্রমাগত প্রবাহ থাকবে।’
নয়াদিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজাতা অশ্বরিয়া বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক শ্রম সম্পর্ক রয়েছে। ভারতীয়দের তারা পেশাদারিত্বের জন্য পছন্দ করে।
তিনি আরো বলেন, ‘ভারতীয়রা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার কারণ হলো, সেখানে তারা দেশের তুলনায় ভালো বেতন পায়। সময়ের সাথে সাথে এই উপাদানগুলো পরিবর্তিত হয়নি। অতএব, আগ্রহের পরিপূরকতা রয়েছে এবং এই সমীকরণটিও সফল হয়েছে।’
শ্রম অভিবাসনের গতিশীলতার ক্ষেত্রে যা পরিবর্তন হতে পারে, তা হলো জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে ভারতীয় প্রবাসীদের বিতরণ, তাদের দক্ষতার স্তর, বিশেষ করে সৌদি আরবে উদ্ভূত পেশাদারদের জন্য আরো বেশি সুযোগ এনে দেয় ভারতীয়দের নিয়োগ।
রাজনৈতিক ম্যাগাজিন হার্ড নিউজের প্রধান সম্পাদক সঞ্জয় কাপুর বলেন, ‘সৌদি আরব অতীতের তুলনায় অনেক ধনী। তারা দু’টি শহর তৈরি করছে। এর অর্থ হলো ভারতের শীর্ষ প্রতিভার জন্য সুযোগ। ভারত থেকে কর্মীদের মান এখন নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘উপসাগরীয় অঞ্চল উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতীয়দের জন্য অনেক কিছু বোঝায়। এটি ভালো-মানের জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করে। তারা বাড়িতে যা পায় তার চেয়ে বেশি বেতন এবং বহুত্বের জন্য সম্মান পায়। ভারতীয় সমাজের সকল খারাপ দিক উপসাগরে অনুপস্থিত।’
সূত্র : আরব নিউজ