সম্ভাব্য সাইবার হামলা ঠেকাতে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা বা তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষা করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে অনলাইন লেনদেন, এটিএম বুথের মাধ্যমে লেনদেন, পস মেশিনের মাধ্যমে কেনাকাটার অর্থ পরিশোধের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করতে হবে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর মেইলে বা ওয়েবসাইটে অপরিচিতি কোনো ই-মেইল বা বার্তা এলে সেগুলোতে ক্লিক না করে ফিল্টার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো সমস্যা দেখা দিলে কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) বা বাংলাদেশ ব্যাংককে তাৎক্ষণিক জানাতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো দুই দফা চিঠিতে এ নির্দেশনা দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। সময়ে সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিকিউরিটি ইউনিট ও পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে, গত ৩ আগস্ট প্রতিবেশী একটি দেশের হ্যাকার গ্রুপের হুমকি থেকে। কারণ গত জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালানো হচ্ছে। তবে এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশের একটি হ্যাকার গ্রুপ গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবকাঠামোতে সাইবার হামলা করার হুমকি দেয়। তারা দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সামরিক অবকাঠামো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামোতে সাইবার হামলার হুমকি দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সার্ট থেকে সারা দেশে সাইবার সতর্কতা জারি করা হয়। হ্যাকার গ্রুপটি ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে সাইবার হামলার হুমকি দিলেও সার্ট মনে করছে যেকোনো সময় বা ১৫ আগস্টের আগে পরেও এ তারা হামলা করতে পারে। এ কারণে সাইবার হামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সার্ট সব সময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সার্ট এরই মধ্যে ভুয়া কিছু ওয়েবসাইট ও ই-মেইল আইডি শনাক্ত করেছেন। যেগুলোর মাধ্যমে সাইবার হামলা চালানো হতে পারে। এসব লিংক সার্ট সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। এগুলোতে ক্লিক না করে সেগুলো ফিল্টার বা অপসারণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে সার্টের পরামর্শ নিতেও বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যভাণ্ডার ডেটা সেন্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে গ্রাহক ও ব্যাংকের সব তথ্য রয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে সব ব্যাংক লেনদেন করে বলে এই তথ্যভাণ্ডারের ব্যবহারও বেশি। এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের হিসাব থেকেও টাকা স্থানান্তর করতে পারে অনলাইনে। যে কারণে তথ্যভাণ্ডারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদেরকে বলা হয়েছে। এ জন্য ২৪ ঘণ্টা সার্ভারের তদারকি করতে করবে হবে। বেআইনিভাবে কেউ কোনোভাবেই যেন সার্ভারে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে চিঠিতে। একই সাথে তথ্যভাণ্ডার বা সার্ভারের নিরাপত্তায় সর্বাধুনিক ফায়ারওয়াল বা নিরাপত্তা বেষ্টনীর সফটওয়্যার সংযোজন করতে বলা হয়েছে। এগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ও সুনামদারি ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এগুলো পরিচালনা ও তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তার জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ দিকে এটিএম বুথ, পস মেশিন ও অনলাইন লেনদেনে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বুথগুলোতে নজদারি রাখতে বলা হয়েছে। কেননা এর আগে পস মেশিন ও অনলাইন বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে সুরক্ষার জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সতর্ক থাকতে সম্প্রতি দুই দফা চিঠি দিয়েছে।
একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক এরই মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি। সাইবার সিকিউরিটিকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। সাইবার হামলা থেকে গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা রাখতেই বাড়তি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।