বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোঝিন নিহত

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩
  • ৩৬ বার

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে রুশ ভাড়াটে বাহিনীর প্রধান ইয়েজেনি প্রিগোঝিন নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এই দাবি করেছে। মঙ্গলবার আফ্রিকার মরুভূমি থেকে সমাজমাধ্যমে ভিডিও বার্তা পোস্ট করে আইএস এবং আল কায়দার বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর কথা ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা ঘটল। তবে বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল নাকি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

একটি রুশ টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচারিত একটি খবরে দাবি, বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি বেসরকারি সংস্থার এমব্রেয়ার লিগ্যাসি বিমান তেভর অঞ্চলের কুজেনকিনো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে পাইলট, ক্রু, যাত্রীসহ মোট ১০ জন ছিলেন। তাদের সকলেই মারা গিয়েছেন। মৃতদের তালিকায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একদা ঘনিষ্ঠ প্রিগোঝিন রয়েছেন বলে প্রকাশিত ওই খবরে দাবি। যদিও এর আগেও রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রিগোঝিনের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে ওয়াগনার গ্রুপের কমান্ডার দিমিত্রি উতকিনও ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। বিমানটিতে তিন ক্রুসহ মোট ১০ জন আরোহী ছিলেন বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে। তারা সবাই নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

মস্কোর সাংবাদিক ড্যানিয়েল হাউকিন্স আল জাজিরাকে বলেন, ‘রুশ মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হয়েছে যে বিমানটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়ে থাকতে পারে। তবে এই খবরের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।’

এর আগে মঙ্গলবার রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাদলের নেতা প্রিগোঝিন ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন, এখন আফ্রিকার মরুভূমিই তার ঠিকানা। ওয়াগনার বাহিনীতে নতুন করে যোদ্ধা নিয়োগের কথা ঘোষণা করে ‘ইচ্ছুকদের’ যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দিয়েছিলেন তিনি। ভিডিও দেখে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, প্রিগোঝিন এখন সাহারা মরুভূমি লাগোয়া কোনো দেশে রয়েছেন। তবে ঠিক কোথায় তিনি রয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি একদা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ ওয়াগনার প্রধান। ভিডিও বার্তায় প্রিগোঝিন বলেন, ‘এখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি। তবে আমরা খুশিতেই রয়েছি। ওয়াগনার এখন সব মহাদেশে রাশিয়ার গৌরব বাড়াতে অবদান রেখেছে। এবার আফ্রিকার মানুষকে মুক্তি এবং আনন্দের স্বাদ দিতে এবং তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করব। আমরা ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়দাসহ সব উগ্রবাদীদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হব।’

উল্লেখ্য, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে প্রিগোঝিন খুন করা হয়েছে বলে জুলাই মাসের প্রথম দিকে অভিযোগ উঠেছিল। মস্কোর বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর প্রিগোঝিন বেলারুশে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জল্পনা ছিল। গত বছর কিয়েভ, দনবাসসহ ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চল দখলের গুরুদায়িত্ব তারই বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু রুশ ধনকুবের প্রিগোঝিনের ভাড়াটে যোদ্ধাগোষ্ঠী ওয়াগনারের ‘বন্দুকের নল’ গত জুন মাসে ঘুরে যায় পুতিনেরই দিকে। রুশ প্রেসিডেন্ট সেই ‘বিদ্রোহ’ সফলভাবে মোকাবিলার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল প্রিগোঝিনের ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে। এর পর হঠাৎ তার নিখোঁজ থাকার ঘটনায় নতুন করে জল্পনা ছড়ায়। তাকে খুন বা জেলবন্দি করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল পাশ্চাত্যের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

জুন মাসে ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেন সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকার দখল নিয়েছিল। এর পর তারা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উদ্দেশে অভিযান শুরু করে। কিন্তু ওই সময় পুতিন দ্রুত নিজের অনুগত রুশ সেনাকে সামনে রেখে ‘বিদ্রোহীদের’ নিরস্ত করেছিলেন। প্রিগোঝিন সে সময় রাশিয়া থেকে বেলারুশে চলে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল। পুতিন ঘনিষ্ঠ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দাবি করেছিলেন, তিনিই মস্কোর সাথে ওয়াগনার বাহিনীর সমঝোতা করিয়েছেন। আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি তরফে সে সময় শোনা গিয়েছিল, সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী প্রিগোঝিনকে বেলারুশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘তাৎপর্যপূর্ণভাবে’ লুকাশেঙ্কো দাবি করেন, তার দেশে প্রিগোঝিন নেই। ক্রেমলিনের তরফেও জানানো হয়, ওয়াগনার প্রধান কোথায় তারা জানে না।

সেই পরিস্থিতিতে প্রিগোঝিন বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল। ওয়াগনার বাহিনী ‘রণে ভঙ্গ’ দেয়ার পরে ‘অজ্ঞাতবাসে’ যাওয়া প্রিগোঝিন অডিও বার্তায় দাবি করেছিলেন, বিদ্রোহ নয়, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকার এবং তার সেনাবাহিনীর আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পথে নেমেছিলেন তারা। একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ হোটেল ব্যবসায়ী প্রিগোঝিনের ওই ভাড়াটে বাহিনী রুশ সেনাবাহিনীর অংশ নয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তারা রুশ বাহিনীর সহযোগী হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অতীতে লিবিয়া, সিরিয়া, মোজাম্বিক, সুদানের মতো দেশে গৃহযুদ্ধেও লড়েছে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধার এই পেশাদার ভাড়াটে বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে চলতি বছরের গোড়া থেকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সাথে মতবিরোধ চলছিল প্রিগোঝিনের। রুশ সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে‌ ওয়াগনার যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

সূত্র : আল জাজিরা, বিবিসি, আনন্দবাজার এবং অন্যান্য

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com