জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটি আমাদের দেশে উপেক্ষিত হয়ে আছে। খাদ্যপণ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজরদারি নেই। ফলে বাজারে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি এমন পণ্যও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। নিত্যদিনের আহারে মানুষ মাছ-গোশত খায়। এ দুটো প্রোটিন-জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করতে হয়। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে প্রাণী থেকে। ফলে পশুপাখি জবাই করে সেগুলোর গোশত প্রক্রিয়াজাতকরণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে হয়। এর সংরক্ষণে স্বাস্থ্যপ্রদ পন্থা অবলম্বন করতে হয়। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বিপুল মহিষের গোশত উদ্ধার করেছে। সেগুলো খাবার উপযুক্ত ছিল না। আদালত এগুলো বাজেয়াপ্ত না করলে ভোক্তাদের কাছে চলে যেত। এখন মানুষের সমাজে যেভাবে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করে এসব ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
খবরে জানা যাচ্ছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত গত বুধবার গাবতলী বাস টার্মিনালে একটি বাসে অভিযান চালায়। ওই বাসে মালামাল রাখার জায়গা থেকে আদালত ১৪৮ কেজি মহিষের গোশত জব্দ করে। গোশত রাখার জায়গাটি ছিল অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন। এ গোশত রংপুরের উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছিল। সময়মতো জব্দ করা না হলে এগুলো অচিরেই ভোক্তাদের কাছে চলে যেত। এই সূত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত আরো একটি অভিযান চালায়। সেটি ছিল মিরপুর-১১ নম্বরে। সেখানে একটি গুদাম থেকে এক হাজার ৪৮০ কেজি এবং অন্য একটি গুদাম থেকে ৩৭০ কেজি মহিষের গোশত জব্দ করে। এসব গুদাম গোশত রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর ছিল না। এমনকি সঠিক তাপমাত্রায় সেগুলো সংরক্ষিত হচ্ছিল না। ফলে এসব গোশতের গুণগতমান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। খাওয়ার অনুপযোগী এসব গোশত রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ এমনকি সুপারশপে সরবরাহ করে থাকে বলে জানা যায়। রাজধানীর বাইরেও এখান থেকে তারা গোশত পাঠায়।
ভারত থেকে এসব গোশত আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু এসব গোশতের গুণগতমানের কোনো সনদ ছিল না। আমদানির বিপরীতে চালান ও নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। গোশত আমদানির ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পচা-বাসি কিংবা অস্বাস্থ্যকর উপায়ে রক্ষিত গোশত খেলে ক্ষতিকর রোগব্যাধি দেখা দেয়ার ঝুঁকি থাকে। ভারত থেকে এভাবে কাঁচা গোশত আমদানি করা কতটা যৌক্তিক? এ ব্যাপারে সরকারের অনুমতি যদি থেকে থাকে তাহলেও নিয়মকানুন ঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে কি না সেটি নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। বাস্তবে যা করা হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত মোট এক হাজার ৯৯৮ কেজি গোশত জব্দ করে সেগুলো মাটিচাপা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারির বাইরে আরো কত এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ গোশত মানুষের কাছে চলে গেছে সেটি আমরা জানি না।
এ ধরনের ঘটনা আমাদের দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনার প্রমাণ বহন করে। করোনা যেভাবে পুরো বিশ্বকে ওলটপালট করে দিয়েছে, এরপর মনে হয় আমাদের নতুন করে সতর্ক হওয়া উচিত। রাজধানীর বাজারগুলোতে দেদার গোশত বিক্রি হয়। অনেকসময় অসাধু বিক্রেতারা গরুর গোশতের নামে মহিষের গোশতও চালিয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে এসব পচা গোশত খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া দরকার। ভারত থেকে আমাদের দেশে আমদানি হওয়া গোশতের ব্যাপারে বিস্তারিত খবর সরকারের কাছে থাকা উচিত। বাইরের দেশের গোশত যদি আমাদের খেতে হয় তাহলে সেটির গুণগতমান শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। আর আমাদের দেশে গোশত সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ওপর কর্তৃপক্ষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।