নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও খোলাবাজারে ডলারের মূল্য কমছে না। গতকালও প্রতি মার্কিন ডলার ১১৮ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে খোলাবাজারে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দিয়েছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। এমনি পরিস্থিতিতে মানিচেঞ্জারগুলোতে তদারকি জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত সীমার মধ্যেই ডলার লেনদেন করতে হবে। নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে লেনদেনের তথ্য পাঠাতে হবে। ব্যত্যয় হলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মানিচেঞ্জারগুলোর ডলার লেনদেনের সীমা বেঁধে দিয়ে থাকে। ডলার কেনা ও বিক্রির দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সর্বশেষ নির্দেশনা মোতাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে মানিচেঞ্জারগুলো ১১২ টাকা ৫০ পয়সার বেশি দরে ডলার লেনদেন করতে পারবে না। কিন্তু গত কয়েক দিন যাবত ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১২০ টাকারও উপরে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে খোলাবাজারে। ইতোমধ্যে ৮টি মানিচেঞ্জারকে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ৭টির লাইসেন্স স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। ১০টি মানিচেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরেও গতকাল প্রতি ডলার ১১৮ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে খোলাবাজারে।
এই পরিস্থিতিতে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রোববার এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সীমার মধ্যেই ডলার লেনদেন করতে হবে। এর ব্যত্যয় হওয়া যাবে না। নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তথ্য পাঠাতে হবে। অন্যথায় আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক মানিচেঞ্জারের স্বত্বাধিকারী গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব নির্দেশনা আমরা মানতে বাধ্য। কারণ আমাদের লাইসেন্স দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া দরে ডলার কিনতেও পারছি না। যদি ১১২ টাকায় ডলার কিনতে না পারি তাহলে আমরা ১১২ টাকা ৫০ পয়সায় কিভাবে ডলার বিক্রি করবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ কারণে গত কয়েক দিন যাবত অনেক মানিচেঞ্জিং প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকেই এসে ডলার চাচ্ছেন। অনেকেই বিক্রি করতে চাচ্ছেন। কিন্তু খোলাবাজারে আমরা ১১৭ টাকার কমে ডলার কিনতে পারছি না। তা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া দরে আমরা কিভাবে ডলার বিক্রি করবো। এ দিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিনই হানা দিচ্ছে। সুতরায় আমাদের কান্না কেউ শুনতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অপর একজন বলেন, স্বয়ং ব্যাংকই রেমিট্যান্সের ডলার নির্ধারিত দরে কিনছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া দর মানছেন না। তারা বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছেন। আবার গ্রাহকের কাছ থেকে বেশি দরেই ডলার বিক্রি করছেন। কিন্তু সেখানে তেমন উদ্যোগ নেই প্রতিহত করার। শুধু গরিব মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোকেই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে গিয়ে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।