করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যত বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘লকডাউন’ করে ভাইরাসটিকে দমন করার চেষ্টা চলছে সর্বত্র। তবে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুবকরাও ‘অজেয়’ নন বলে জানিয়ে দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রস এডনাহম বলেন, যদিও বয়স্ক ব্যক্তিদের সবচেয়ে ঝুঁকি রয়েছে। তারপরও যুবকরাও পুরোপুরি ঝুঁকি মুক্ত নন। অনেক দেশেরই তরুণ-তরুণীরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
জেনেভায় আয়োজিত সভায় যুবসমাজের প্রতি তার বার্তা, ‘আপনারা অপরাজেয় নন। এই ভাইরাস আপনাকে পরাজিত করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে। এমনকী আপনার মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।’ ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের গড় বয়স ৭৮ বছর। চীনে ৫০ বছরের নিচে মাত্র এক শতাংশ মানুষ মারা গেছে এই মারণ ভাইরাসে। চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসাকে স্বাগত জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৯ হাজার ৭১১ জন। বিশ্বের ১৮৫টি দেশে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। করোনার মোকাবিলা করতে ‘লকডাউন’-কে হাতিয়ার করছে ইউরোপ থেকে আমেরিকা। ইউরোপের ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন এবং ব্রিটেনের মতো দেশগুলি তাদের নাগরিকদের ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেছে। আমেরিকাতে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। হোয়াইট হাউসের অন্দরে ঢুকে পড়েছে করোনা।
চীন নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পর ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে এনে ফেললেও, বিশ্বে তা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বিশেষ করে, ইতালি তো রীতিমতো যুদ্ধ করছে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। দেশটিতে একদিনেই ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩২ জন। লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করতে ডাকা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। ইতালির পর করোনা ভাইরাসে ধুঁকছে স্পেন। সেখানে নতুন করে ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৯৩ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৫৭১ জন। ফ্রান্সও রয়েছে আশঙ্কাজনক অবস্থায়। সেদেশে ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৬১২ জন। ব্রিটেনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৭৭ জনের। আক্রান্ত তিন হাজার ৯৮৩ জন। জার্মানিতে ৬০ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৮৪৮ জন। সুইজারল্যান্ডে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩৩৬ জন। নেদারল্যান্ডসে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। আর আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৯৪ জন। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রুনো পদত্যাগ করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মৃত ও আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি মিনিটে বাড়ছে। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, শিকাগো, কানেটিকাট ও ইলিনয়ের বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কোমো বলেন, জরুরি প্রয়াজন ছাড়া সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে বলা হয়েছে। তবে জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে। অন্যদিকে, ইরানে করোনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ইরান সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬৪৪ জন।
সূত্র : বর্তমান