বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন

লক্ষণ ছাড়াই করোনার নীরব বাহক, চীনের গোপন নথি ফাঁস

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০
  • ২৩১ বার

কোনো লক্ষণ ছাড়াই করোনাভাইরাসের নীরব বাহকের সংখ্যা মোট আক্রান্তের তিন ভাগের এক বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। চীন সরকারের গোপন নথির উদৃতি দিয়ে এই এ খবর জানিয়েছে সাউথ চায়না মানিং পোস্ট।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, চীনে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের প্রতি তিনজনের একজনের শরীরে করোনায় আক্রান্তের লক্ষণ ছিল না কিংবা অনেক দেরিতে প্রকাশ পেয়েছিল।

এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ, মারা গেছে ১৩ হাজারের বেশি।

ফেব্রুয়ারির শেষভাবে চীনে ৪৩ হাজার মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়। তাদের কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের কোনো লক্ষণ শুরুতে ছিল না। ডাটা বলছে, এ পরিস্থিতিকে বলা হচ্ছে অ্যাসিম্পটোমেটিক। তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল, তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। কিন্তু নিশ্চিত আক্রান্ত বলে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ওই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার।

লক্ষণ ছাড়া করোনা ভাইরাস কতটা সংক্রামক তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। একজন রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সাধারণত পাঁচ দিনের মাথায়। যদিও এই লক্ষণ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সুপ্ত থাকে।

সবচেয়ে বড় বাধাটা হলো, একেক দেশ একেকভাবে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার হিসাব করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষা করে দেখার পর যাদের ফল পজিটিভ আসছে তাদেরই আক্রান্ত বলে ধরে নিচ্ছে। তাদের শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পাক বা না পাক। দক্ষিণ কোরিয়াও তাই করেছে। কিন্তু চীনা সরকার ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ করোনাভাইরাস নিয়ে দেশটির যে নির্দেশনা তাতে কিছু পরিবর্তন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইতালিও যাদের শরীরে কোনো লক্ষণ নেই তাদের পরীক্ষা করছে না। তবে যারা দীর্ঘ সময় রোগীদের চিকিৎসা সেবায় যুক্ত ছিলেন তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ না থাকলেও পরীক্ষা করা হয়েছে।

চীনে গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ হাজার জনের মধ্যে কতজন নীরব বাহক ছিলেন এবং তাদের কতজনের মধ্যে পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তা এখনো পরিষ্কার নয়। সরকার গত শনিবার পর্যন্ত যে ৮১ হাজার ৫৪ জনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিল, এই ৪৩ হাজার তাদের বাইরে। কিন্তু মার্চের প্রথম সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা কমে যায় অনেক। এর অর্থ ওই ৪৩ হাজারের শরীরে আর রোগ লক্ষণ প্রকাশই পায়নি। অর্থাৎ তারা ভাইরাসটি বহন করলেও অসুস্থতার কোনো লক্ষণ ছিল না।

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া যারাই আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল, তাই তাদের ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। হংকং এমনকি বিমানবন্দরেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করে, যাত্রীদের শরীরে রোগের লক্ষণ থাকুক বা নাই থাকুক। এদিকে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ এবং

যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র যাদের শরীরে লক্ষণ দেখা দিয়েছে তাদের পরীক্ষা করেছে। এই দেশগুলোয় রোগ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

‘কোরিয়ায় এই মুহূর্তে লক্ষণ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । হয়তো ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা নিরীক্ষার কারণেই এমনটা ঘটেছে,’ দক্ষিণ কোরিয়ার সিডিসির পরিচালক জিয়ং ইউন কাইওং এক সংবাদ সম্মেলনে এ গত ১৬ মার্চ এ কথা জানান।
ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে। ইয়োকোহামা জাপানে এই জাহাজটি কয়েক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে ছিল এটি। এই জাহাজের সব আরোহী এবং ক্রুদের পরীক্ষা করা হয়। ওই জাহাজের ৭১২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যদিও ৩৩৪ জনের কোনো লক্ষণ ছিল না। এই তথ্য জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদন বলছে, ইতালিতে লক্ষণ প্রকাশ পায়নি এমন রোগীর সংখ্যা মোট আক্রান্তের ৪৪ শতাংশ।

চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও হংকং নিউমোনিয়ার যে কেসগুলো এসেছিল জানুয়ারি ২৩ এ উহান লকডাউন হওয়ার আগে এই কেসগুলোই ছিল সংক্রমণের উৎস। এর হার ছিল ৭৯ শতাংশ। এই রোগীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের খুবই মৃদু বা কোনো লক্ষণই ছিল না।

অস্টিনে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের গবেষণা বলছে, ‘যাদের শরীরে কখনো কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি তারা চীনের ৯৩ টি শহরের সাড়ে ৪শ কেসের ১০ শতাংশের জন্য দায়ী। ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজেস নামে জার্নালে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ছাপা হওয়ার অপেক্ষায় আছে। লক্ষণ নেই এমন রোগীদের মধ্যে বড়দের চেয়ে শিশুদের সংখ্যাই বেশি,’ গবেষক নিশিউরা লিখেছেন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিজ প্রকাশনায় । সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com