করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের প্রতিটি পাড়া মহল্লা কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে চায় সরকার। ভাইরাসে আক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার জন্য জোরালোভাবে কাজ চলছে। বিশেষ করে বিদেশফেরত প্রবাসীদের বাড়ি চিহ্নিত করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রবাসী নাগরিকদের নিজ এলাকায় ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ নিশ্চিত করার জন্যও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া খুব শিগগিরই তথ্য মন্ত্রণালয় জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ সেল গঠন করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস এখন সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। চীনের উহান থেকে এটি ১৭৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ২৭ জন এবং দুইজন মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় সে ক্ষেত্রে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশকে লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও সরকার আপাতত পুরো দেশ লকডাউন না করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার দিকে নজর দেয়ার কথা ভাবছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে করোনাভাইরাস বিদেশফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে চায় সরকার। এ জন্য বিদেশফেরত মানুষের ঠিকানা সংগ্রহ করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
জেলাভিত্তিক তালিকা ইমিগ্রেশন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে সোজা চলে যাচ্ছে জেলা প্রশাসকের কাছে। জেলা প্রশাসক নিজে তার ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে উপজেলাভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন ইউএনওদের কাছে। উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ওসি, ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্য, স্বাস্থ্যকর্মী, দফাদার ও চৌকিদারদের সাথে সমন্বয় করে ইউএনও বিদেশফেরত মানুষের বাড়িতে গিয়ে হানা দিচ্ছেন, ওই প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় হোম কোয়ারেন্টাইন না মানায় জরিমানা করা হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাদারীপুরের শিবচর, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর এবং মিরপুরের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিদেশ প্রত্যাগত নাগরিকদের ‘হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ১৮ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশও মন্ত্রণালয় জারি করেছে। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কমিটিকে দেখভাল করার জন্য মন্ত্রণালয় সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সারা বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও বেশ কিছু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ জন্য সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক দুর্যোগ। আমরা যে যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করছি, এই দুর্যোগের হাত থেকে দেশ-জাতি-রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জনগণকে সচেতন করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমরা জনসচেতনতার জন্য সেল গঠন করতে যাচ্ছি। সেখানে টেলিভিশন, বেতার, গণযোগাযোগ অধিদফতর, তথ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি থাকবে। প্রজ্ঞাপন জারি করার পর এই ‘সেল’ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং করোনা প্রতিরোধে গঠিত টাস্কফোর্সের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনাভাইরাসের পুরো বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশের কোথায় কোথায়, কোন ইউনিয়নে বিদেশফেরত লোকজন আছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখতে সরকার কাজ করছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।