মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

কঠিন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের শেষ চারে যাওয়া!

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৪৩ বার

চেন্নাইতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ও তার আগে ধরমশালায় ইংল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যাওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ল।

কাগজে-কলমে হয়তো শেষ চারে পৌঁছনো এখনো অসম্ভব নয়, কিন্তু তার জন্য বাংলাদেশকে প্রায় দু-তিনটি বড় মাপের ‘আপসেট’ বা অঘটন ঘটাতেই হবে।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, রাউন্ড রবিন লীগের ৯টা ম্যাচের মধ্যে চার-পাঁচটায় জিতে সেমিফাইনালে যাওয়াই তাদের প্রথম লক্ষ্য।

সেই চার-পাঁচটার টার্গেটের মধ্যে আফগানিস্তান ম্যাচে লক্ষ্যভেদ হয়েছে সহজেই। কিন্তু বাকি ছয়টা ম্যাচের মধ্যে তিন-চারটিতে জেতা শুধু কঠিন নয়– খুব কঠিন!

এই ছয়টা ম্যাচে বাংলাদেশ পর পর খেলবে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ।

এর মধ্যে যদি কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে নেদারল্যান্ডস ম্যাচটা সহজেও জেতা যায়, তারপরও বাকি পাঁচটা ম্যাচে অন্তত তিনটি শক্ত প্রতিপক্ষকে হারাতেই হবে বাংলাদেশকে।

চেন্নাইতে ম্যাচ-পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে এসে নাজমুল হোসেন শান্তও তাই প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিলেন, সামনের রাস্তা ক্রমশ দুর্গম হয়ে উঠছে।

সেমিফাইনালে ওঠার কথা তুলতেই তার জবাব, ‘এখন এটা করতে চাই, ওটা করতে চাই ওসব বলে কী লাভ? আগে আমাদের ভালো খেলতে হবে, কামব্যাক করতে হবে!’

তবে একটা ভালো ম্যাচ খেলতে পারলেই সেটা টিমের পরিবেশ পুরো বদলে দেবে– এই আত্মবিশ্বাসী সুরও শোনা গেল শান্তর গলায়।

কিন্তু গত শনিবার আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট যেরকম দারুণভাবে শুরু করেছিল বাংলাদেশ, তার পর এক সপ্তাহ না-ঘুরতেই তারা যে বেশ হতোদ্যম– ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় সেটা কিন্তু লুকোনো যাচ্ছে না।

এই পটভূমিতেই পুরো পাঁচ দিন বিশ্রামের পর আগামী বৃহস্পতিবার পুনেতে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে বাংলাদেশ– যেটা তাদের জন্য সেমিফাইনালের লড়াইতে টিঁকে থাকার শেষ সুযোগ বললেও বোধহয় ভুল হবে না।

কেন বারবার ব্যাটিং বিপর্যয়?
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা যে ধারাবাহিকভাবে টপ অর্ডারের বিপর্যয়, তা বোঝার জন্য ক্রিকেট পণ্ডিত হওয়ার কোনো দরকার নেই।

ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচে তো বটেই, এমনকি আফগানিস্তান ম্যাচেও স্কোরবোর্ডে ৩০ রান ওঠার আগেই বাংলাদেশ তাদের দুই ওপেনারকে হারিয়েছিল।

বস্তুত পরিসংখ্যান বলছে, আজকের আগে বাংলাদেশের খেলা শেষ ১২টা ওয়ান-ডের ৯টাতেই ১০০ রানের কমে তাদের চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল।

এই টপ অর্ডারের অন্যতম স্তম্ভ তথা ভাইস ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত মনে করেন, এখানে সমস্যাটা স্কিল বা টেকনিকের নয়– দায়িত্ব নিতে পারার অক্ষমতায়।

‘দেখেন আমাদের দায়িত্ব নতুন বলটা খেলে দেওয়া। এখানে টপ অর্ডারকে আরও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে – বোলারদের ডিফেন্ড করার মতো একটা ভালো টোটাল দিতে হবে, যেটা আমরা পারিনি’, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর তার অকপট স্বীকারোক্তি।

ভারতের ক্রিকেট লেজেন্ড ও ভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকর আবার বাংলাদেশের এই ব্যর্থতার একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

মঞ্জরেকর মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশই একমাত্র টিম যাদের পাঁচবার বিশ্বকাপ খেলা দু’জন ক্রিকেটার আছেন – সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। চারটি বিশ্বকাপ খেলা হয়ে গেছে মাহমুদুল্লাহ্-রও।

বিশ্বকাপে সফল প্রায় প্রতিটা টিমেই সিনিয়রদের পাশাপাশি তরুণরা উঠে এসেছেন এবং তারা ‘ওয়ার্কলোড’ ভাগ করে নিচ্ছেন।

অথচ বাংলাদেশের বেলায় দেখা যাচ্ছে, দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারের কাজটা সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর মতো প্রবীণদেরই কাঁধে নিতে হচ্ছে– দলের তরুণরা এখানে ব্যর্থ হচ্ছেন বলেই বাংলাদেশের ভরাডুবি এত চোখে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন মঞ্জরেকর।

এর উপর চলছে ব্যাটিং অর্ডারে নিত্য ওলটপালট!

তিন নম্বরে দিব্যি সফল ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, বিশ্বকাপে তাকে খেলানো হচ্ছে চার নম্বরে।

তওহীদ হৃদয় পাঁচ নম্বরে বেশ ভালো খেলছিলেন, সাত নম্বরে ‘ডিমোশন’ পাওয়ার পর তিনিও ব্যাটিংয়ের ছন্দ হারিয়েছেন।

‘ব্যাটিং অর্ডার কীসের ভিত্তিতে ঠিক করা হয়, সেটা কোচ আর ক্যাপ্টেনই বলতে পারবেন’, এটা বলেই অবশ্য পাশ কাটাতে চাইলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

‘এটুকু অবশ্য জানি প্রতিটা ম্যাচেই কে কত নম্বরে ব্যাট করবে সেটা আগেভাগেই তাদের জানিয়ে দেয়া হয়!’

‘দলের প্রয়োজনে যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতেই আমি রাজি। আর এটা দলের সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, ব্যাটিং অর্ডারে অদলবদল হলে সেটা নিয়ে কেউ কিন্তু অভিযোগ করছে না’, এভাবেই সিদ্ধান্তটা ডিফেন্ড করার চেষ্টা করলেন তিনি।

সাকিবের ক্র্যাম্প
বিশ্বকাপের পয়েন্টস টেবিল-ই কিন্তু বাংলাদেশের এখন একমাত্র দুশ্চিন্ত নয়, গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সাকিব আল হাসানের ফিটনেস নিয়েও টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে ভাঁজ পড়ছে।

শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪০ রানের ইনিংসটি খেলার সময় সাকিবকে একাধিকবার মাসল ক্র্যাম্পে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

পরে অবশ্য দল ফিল্ডিং করার সময় সাকিব বল হাতে বেশ দ্রুতই আক্রমণে চলে আসেন– কিন্তু বোলিংয়ের সময়ও যে তার একটা শারীরিক অস্বস্তি আছে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল।

সাকিবের অস্বস্তির উৎসটা কোথায় – বা তার যেখানেই আঘাত লাগুক সেটা কতটা গুরুতর, তা জানতে ম্যাচের পরই বাংলাদেশ অধিনায়ককে স্ক্যান করাতে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ম্যাচের শেষে নাজমুল হোসেন শান্তও জানান, স্ক্যানের রিপোর্ট হাতে পেলে তার পরেই তারা বুঝতে পারবেন সাকিবের ঠিক কী হয়েছে।

এর আগে গুয়াহাটিতে বিশ্বকাপের ওয়ার্মআপ ম্যাচগুলো খেলার সময় প্র্যাকটিসে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন সাকিব – যে কারণে তিনি একটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি।

এখন সেই পুরনো আঘাতের জায়গাতেই তিনি নতুন কোনও চোট পেলেন, না কি তার অন্য কোথাও লাগল … আর সেটা কতটা সিরিয়াস … অধীর উত্‌কণ্ঠা নিয়ে বাংলাদেশ টিম সেটা জানারই অপেক্ষায় রয়েছে।

ঘটনাচক্রে সাকিবের প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের জন্যও শুক্রবারের ম্যাচটা ছিল প্রত্যাবর্তনের ম্যাচ।

হাঁটুর আঘাত সারিয়ে আর রিহ্যাবে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে উইলিয়ামসন প্রায় সাত-আট মাস পর দেশের হয়ে নামলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই, আর নেমেই খেললের ৭৮ রানের একটি ঝকঝকে, নির্ভরযোগ্য ইনিংস।

তবে ৭৮ রানে খেলার সময়ই ফিল্ডারের ছোঁড়া একটি বল হাতে লাগায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়েই উইলিয়ামকে মাঠ ছাড়তে হয়– নইলে হয়তো গতকাল সেঞ্চুরিও তার নিশ্চিতই ছিল!
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com