সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী; ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। সমাজের জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষক অন্যতম। আজ যারা দেশের মানুষের সামনে জ্ঞান-গম্ভীর কথা বলছেন; অফিস-আদালতে কাজ করছেন তারা একদিন ছাত্র ছিলেন। শিক্ষক তার ভালোবাসার চাদরে আগলে রেখে, পরম স্নেহে তাদের বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান দিয়েছেন। এই শিক্ষকরা হচ্ছেন সভ্যতার অভিভাবক, সমাজের প্রতিনিধি। তারা শিক্ষার্থীকে চরিত্র গঠনে, নৈতিক ও মানসিক গুণাবলি বিকাশে এবং সমাজ বিবর্তনের অনুঘটক ও সুশীল সমাজ তৈরির সহায়তা দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জ্ঞান অন্বেষণের গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান হতে পারে?’ (সূরা জুমার-৯)
শিক্ষকরা সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার কাজে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার পরও ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভালো ফল করতে পারে, এ জন্য বিভিন্ন সময় আলাদাভাবে তাদের সুন্দর সুন্দর দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। শিক্ষকরা জাতিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে নিজেরা মোমের মতো নিঃশেষিত হন। একজন শিক্ষক নিজে শিক্ষা অর্জন করার পরপরই অপরকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত ও চরিত্র গঠনে দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল সা: হাদিসে বলেছেন, ‘আল্লাহর পর, রাসূল সা:-এর পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে বিদ্যা অর্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’
শিক্ষক মহান পেশায় নিয়োজিত। তাদের নেই কোনো অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। তাদের জীবন সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে কষ্ট হয়ে পড়ে।
স্বল্প আয়ের কারণে তারা নিজেদের সন্তানকে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে পারেন না। অসুস্থ হলে ভালো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন না। কষ্টের মধ্যে তাদের জীবন পার করতে হয়। তাই তাদের জন্য ভালো বেতনভাতার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আমরা শিক্ষকদের ভালোবাসি। এই ভালোবাসার কথা শুধু মুখে বললেই হবে না, তাদের সামাজিক ও সঠিক মর্যাদার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক মর্যাদা আর অর্থনৈতিক সুব্যবস্থা না থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষকতার পেশায় আসতে চান না। তাই শিক্ষকদের বেতন কাঠামো এমন হতে হবে, যাতে সমাজে শিক্ষকতার পেশার গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কোনো শিক্ষক যেন কোনো শিক্ষার্থীর হাতে অপমানিত না হন সে দিকে লক্ষ করতে হবে। একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শেখো, তোমরা তাকে সম্মান করো যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করেছ।’ (আল মুজামুল আউসাত)
লেখক :
আলেম, খতিব, গবেষক