প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা চীন এবং ইতালিকেও ছাড়িয়ে গেছে। নিউইয়র্কে চার নারীসহ ১৩ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানে মুমুর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন অনেক প্রবাসী। এতে কমিউনিটির মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৫৭০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১লক্ষ।একদিনেই দেশে রেকর্ড সংখ্যক ১৭ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬৮ জনের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর এ মিছিল প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে।
চীন এবং ইতালির পর এখন সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো অঙ্গরাজ্যেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক মহামারির পরবর্তী কেন্দ্র হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ ইতালির মতোই ভয়াবহ চিত্র হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউইয়র্ক। সেখানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত নিউইয়র্কে ৪২০০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪৭০জন।
এ পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউজে প্রতিদিন ব্রিফ করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। তিনি নিউইয়র্কের সবাইকে ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি সম্প্রতি যারা নিউইয়র্ক ভ্রমণ করেছেন তারাও নিজ স্থানে ফিরে গিয়ে থাকলে সেখানেও কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এদিকে, প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণার পর ফ্লোরিডার গভর্নর বলেছেন, নিউইয়র্কের বাসিন্দা যারা অঙ্গরাজ্যে এসেছেন তাদের প্রত্যেককে কোয়ারিন্টেনে থাকতে হবে। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে ৫০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ১২ এপ্রিল ইস্টার সানডে’র আগে যুক্তরাষ্ট্রে লক ডাউন হওয়া সবকিছু খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ বিশেষজ্ঞরা তার এ বক্তব্যের সাথে একমত হননি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি এন্ড ইনফেকশাস ডিসিজের পরিচালক এন্থনি ফওসি বলেন, ‘কারো পক্ষেই কোনো কিছু সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ কোভিড নাইটিন এখন আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।’
হোয়াইট হাউজ করোনা ভাইরাস রেসপন্স কোঅর্ডিনেটর ড. দেবোরা বিরক্স বলেছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে, নিউইয়র্কের গভর্নল অ্যান্ড্র কুমো বলেছেন, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামাদি (পিপিই) পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। যদিও হাসপাতালগুলোতে কিট ও পিপিই সংকট চরমে। এল্মহার্স্ট হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলাদেশি নারী চিকিৎসক বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তিনি একটি মাস্ক আটদিন ধরে ব্যবহার করছেন। যেখানে আগে একটি মাস্ক প্রতি ১০ মিনিট পরিবর্তন করতেন তিনি, সেখানে সপ্তাহেও একটি নতুন মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান প্রদেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে কোভিড নাইনটিনে এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৭০ জন।
বৃহস্পতিবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৮৫ হাজার ৫৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চীনে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ৮১ হাজার, ইতালিতে ৮০ হাজার ৫৮৯ জন ও স্পেনে ৫৭ হাজার ৭৮৬ জন। করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে ৮ হাজার ২১৫ জন মারা গেছেন। স্পেনে ৪ হাজার ৩৬৫, চীনে ৩ হাজার ২৯২ এবং যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন ১২৯৩ জন।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন।