মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে চুরি করা ভারতীয় চিনি ছিনতাই করতে গিয়ে বিএনপির ২ নেতা আটক শহিদ আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা ঊর্মির এবার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন, চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সংঘাত, নারী-শিশুসহ নিহত ১৬ থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করা নারী খুন, গ্রেপ্তার পুলিশ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সুপারিশের ব্যাখ্যা দিলেন আবদুল মুয়ীদ তারেক রহমানের সব মামলা প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি পিরিয়ডের সময় যেসব খাবার খাবেন

করোনায় কঠিন পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া মানুষেরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০
  • ২৩১ বার

আকলিমা খাতুন। বয়স প্রায় ৪৫ বছর। প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজধানীর গোড়ান, দক্ষিণ বনশ্রী ও বাসাবো এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করেন। থাকেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া এলাকায়। স্বামী রিকশা চালাতেন। মারা গেছেন বছর দেড়েক আগে। বাসাবাড়িতে কাজ করেই দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চলে তার। কিন্তু মরণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে তিনি যেসব বাসায় কাজ করতেন সেখানে যেতে পারছেন না।

বাড়ির মালিক তাকে বলে দিয়েছেন, আপাতত কাজ করতে যেতে হবে না। মাস শেষে যা বেতন হয় দিয়ে দেবেন তারা। আকলিমা খাতুন জানান, আমি এক বাড়িতে মাসিক বেতনে কাজ করে মাসে তিন হাজার টাকা পাই। এর বাইরে একই বিল্ডিং ও আশপাশের বাসাতেও সময় সুযোগ মতো কাজ করে দিয়ে থাকি। সব মিলিয়ে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা রোজগার হয়। কিন্তু করোনার কারণে আর কাজে যেতে পারছি না। যা কিছু আয় ছিল তা দিয়েই চলছে সংসার। কিন্তু করোনাভাইরাস যদি দীর্ঘদিন এভাবে থাকে তাহলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।

আব্দুস সাত্তার। বাড়ি গাইবান্ধায়। রাজধানীতে প্রায় ১০ বছর ধরে রিকশা চালান তিনি। থাকেন গোড়ান এলাকায়। গতকাল সকালে দক্ষিণ বনশ্রী ৯ নম্বরের মাথায় কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ছুটি। রাস্তা-ঘাটে মানুষ নেই বললেই চলে। প্রশাসনের ভয় মাথায় নিয়েই রাস্তায় বের হই। কিন্তু যাত্রী তো নেই। আয় রোজগার যেভাবে হচ্ছে নিজের পেট চালানোই কঠিন। ওর ওপর গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠানোর তাড়া তো আছেই। বাড়ি যাবো, সেটাও তো এই মুহূর্তে পারছি না। এভাবে আর কত দিন থাকবে, আল্লাহ জানে। বেশি দিন থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে।

গতকাল দক্ষিণ বনশ্রীর মসজিদ মার্কেটে দেখা মিলল এক ভিক্ষুকের। কোলে এক শিশুকে নিয়ে ওই নারী ভিক্ষুক মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য চাচ্ছেন। তবে, আগের মতো আর রোজগার নেই বলে জানালেন তিনি। তার বক্তব্য, মানুষের কাছেই তো ভিড়তে দেয় না। বলে দূরে থাকো, কাছো এসো না। সাহায্য আর কিভাবে দেবে?

পৃথিবীজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ৮ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই সংক্রমন ব্যাধিতে। মারা গেছেন প্রায় ৩৪ হাজার। করোনার থাবা পড়েছে বাংলাদেশেও। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। যার মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। করোনা লক্ষণ নিয়ে গত ১০ দিনে সারা দেশে মারা গেছে প্রায় ২০ জনেরও বেশি। ছোঁয়াচে এই রোগ থেকে মানুষকে নিষ্কৃতি দিতে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে। বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তায়ই বের হচ্ছেন না। বদলে গেছে চিরচেনা রাজধানী ঢাকা। অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহনসহ বিভিন্ন নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। এতে স্ত্রী ও সন্তানের খাবার সংগ্রহ করতে হিমশিম খাছেন এসব নিম্ন আয়ের মানুষ। বিপাকে পড়েছেন ভবঘুরে ও ভিক্ষুকেরাও।

শুধু নিম্ন আয়ের নয়, হতাশায় ভুগছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তাব্যক্তিরাও। করোনার কারণে দেশ যদি এভাবে অচল হয়ে থাকে তাহলে সবচেয়ে দুর্দশায় পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। কারণ, না তারা কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য চাইতে পারেন, না কাজ করতে পারছেন। দিনমজুর শ্রেণীর মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি ৪১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণেই এই বিপুল সংখ্যক মানুষই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে। তারা কর্মহীন হয়ে পড়ায় এসব পরিবারে দুঃখের কোনো সীমা নেই।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসে টানা ১০ দিনের ছুটি চলছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ছুটির মেয়াদ আরো কিছুদিন বাড়তে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে আজকালের (মঙ্গল-বুধবার) মধ্যেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও বলেছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় ছুটি হয়তো বাড়তে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো আমরা জানি না। যদি ছুটি আরো বাড়ে বা পরিস্থিতি এ রকমই থাকে তাহলে কর্মহীন প্রায় আড়াই কোটি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরো বাড়বে।

সরকারের চাল ও নগদ টাকা মানবিক বরাদ্দ : এ দিকে সম্ভাব্য করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণ করতে দেশের ৬৪টি জেলার জন্য আট হাজার ৬৫০ টন চাল এবং দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো: শাহজাহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই পরিমাণ চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ৬৪ জেলার সাথে এই বরাদ্দ ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনও পাবে।

চিঠিতে বলা হয়, পৌর এলাকায় বেশি সংখ্যক কর্মজীবী মানুষের বসবাস। তাই জেলা প্রশাসকরা বরাদ্দের ক্ষেত্রে পৌর এলাকাকে গুরুত্ব প্রদান করবেন। মঞ্জুরিকৃত বরাদ্দের ব্যয় চলতি ২০১৯-২০ অথবছরের ত্রাণ কার্য (চাল) এবং রিলিফ অপারেশন রিহ্যাবিলিটেশন (অন্যান্য) ও ত্রাণ কার্য (ইসদ) খাত হতে নির্বাহ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com