ভারত আগামী মার্চ পর্যন্ত বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর এক রাতের ব্যবধানেই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আর দেশী পেঁয়াজ ১৯০ টাকা। পাড়ার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৮০ ও ২০০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকেও পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা খবির হোসেন বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ চার দিন আগেও ৯৫ টাকা কেজিতে কিনেছি, আজ কিনতে হয়েছে ১৭০ টাকা দরে। অতিরিক্ত টাকা না থাকায় মাত্র আধা কেজি কিনতে হয়েছে। দোকানি বলে দিলো দাম না কি আরো বাড়বে।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যা থেকে দাম বেড়েছে। গত রাতে কারওয়ান বাজার থেকেও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এখন তো ২০০ টাকার নিচে আছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই পেঁয়াজের দাম ২-৩ দিনের মধ্যে ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে কুমিল্লার বুড়িচং থেকে আমাদের সংবাদদাতা কাজী খোরশেদ আলম জানান, বিভিন্ন বাজারে গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু রাত পোহানোর সাথে সাথে অর্থ্যাৎ শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বুড়িচং কাঁচা বাজারের দক্ষিণ অংশের মুদি দোকানীরা ২২০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু করে। অপরদিকে উত্তর বাজারের মুদি দোকানীরা ১৮০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু করে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। এক রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ দুপুরে জাতীয় ভোক্তার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিম এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ ছামিউল ইসলামের নেতৃত্বে বুড়িচং বাজারের বিভিন্ন দোকানে অভিযান পরিচালনা করে। এতে মুর্হূতের মধ্যেই আকাশ ছোঁয়া পেয়াজের দাম কমে চলে আসে ১৩০-১৪০ টাকাতে।
বুড়িচং বাজারের এক ক্রেতা বলেন, ‘কী তিলসমতি কারবার! এক রাতেই পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ। মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে? হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম এত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে গেছি। কিভাবে সম্ভব এটা! এক রাতের ব্যবধানে দ্বিগুণ। এত লাভ করা ভালো না। আল্লাহর গজব নেমে আসবে।’
বুড়িচং বাজারের এক মুদি দোকানী বলেন, ‘সকালে আমরা ১৬৫ টাকা করে পাইকারি কিনে করে ১৭০-১৮০ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্ত এখন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কয়েকটি দোকানে জরিমানা করেছে। তারা আমাদের ১৪০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রয় করতে বলছে। এতে অনেকেই বিক্রয় করছে না।’
বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ ছামিউল ইসলাম বলেন, ‘সকালে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের টিমসহ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পাঁচজন ব্যবসায়ীকে ১১ হাজার পাঁচ শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাদের ক্রয়কৃত ভাউচারে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা ১৩৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছে। তাই তাদের ১৪০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুমিল্লা জেলা সহকারী পরিচালক মো: আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ার কারণে শুধু কুমিল্লা নয় সারাদেশেই পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছে এবং আমাদের টিমও কাজ করছে। প্রত্যেক বাজারেই আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে আমাদের সংবাদদাতা শামসুজ্জোহা সুজন জানান, উপজেলায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকা।
শনিবার দুপুরে উপজেলার ভূরুঙ্গামারী হাটে দেখা যায়, দেশী পেঁয়াজ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ কিনতে হাটে আসা ক্রেতারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ, অহেতুক সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দাম বেড়ে গেছে।
লুৎফর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, পেঁয়াজের দাম জিজ্ঞাসা না করে বিক্রেতাকে এক কেজি পেঁয়াজ ব্যাগে ঢুকিয়ে দিতে বলেছিলাম। দাম শোনার পর ব্যাগ থেকে সাড়ে সাত শ’ গ্রাম পেঁয়াজ বের করে দিয়েছি।
আব্দুল হাই নামে আরেক ক্রেতা বলেন, পেঁয়াজ কিনতে বাজারে এসেছি। কিন্তু পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি আগের চেয়ে ১২০ টাকা বেশি।
পেঁয়াজ কিনতে আসা সুকুমারী রানী বলেন, ৫০ টাকা দিয়ে সাতটা মাঝারি আকারের পেঁয়াজ কিনলাম।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে কয়েকজন বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ তাই মহাজনরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি।
এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস বলেন, পেঁয়াজ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে জানতাম না। বিষয়টি দেখছি।
আমাদের চট্টগ্রামের মিরসরাই প্রতিনিধি এম মাঈন উদ্দিন জানান, জেলায় অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় তিন দোকানদারকে আট হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
বিকেলে উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করায় মিরসরাইয়ে এক লাফে ১১০ টাকা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৬০ টাকায় বিক্রি করছে ব্যবসায়িরা।
মিরসরাই উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দোকানদাররা ক্রয় মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির খবর শুনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারের তিন ব্যবসায়ীকে আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আমাদের গাজীপুরের কালীগঞ্জ সংবাদদাতা কাজী মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৮ ও ৪৬ ধারায় পাঁচজনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং বাজার মনিটরিং করা হয়।
দুপুরে কালীগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাফছা নাদিয়া।
মূলত নিজ দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত রফতানি নিষিদ্ধ করার খবর সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে যায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের কানে। এরপরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন তারা।