আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল দেশে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। তবে পুলিশের বাধায় সেখানে কর্মসূচি না করতে পেরে মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে উপস্থিত হন মায়ের ডাকের সংগঠক ও অংশগ্রহণকারীরা। এর আগেই সমাবেশ ঘিরে ছিল পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। পরে তারা প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, এই সরকারের আমলে মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে। আজ যেভাবে গুম-হত্যা হচ্ছে, আজ যেভাবে শাহবাগে পুলিশ আমাদেরকে ধাক্কা দিয়েছে সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। সরকার এতটাই জনবিচ্ছিন্ন, সরকার এতটাই জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যে, মায়ের ডাকের মতো একটা অরাজনৈতিক সংগঠনকেও তারা শাহবাগে আন্দোলন করতে দেয়নি। আমরা সরকারের এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। সারা দুনিয়ার মধ্যে আরেকটা মানবিক বিপর্যয় চলছে এখন বাংলাদেশে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য মানুষকে গুম, হত্যা করছে। অসংখ্য মায়ের বুক খালি করছে। বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে ধরছে, ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে ধরছে। শুধু মাত্র ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতারা এখন জেলখানায়।’
সমাবেশে নাগরিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে গুম হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদেরকে ধাক্কা দিয়ে অপমানজনকভাবে ওখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যতই বলুক এবার কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। যেটা হবে সেটা পাতানো নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নিজের দলের প্রার্থীদেরকে বলছে, স্বতন্ত্র দাঁড়াও, ডামি প্রার্থী দাও। এর থেকে পাতানো নির্বাচন আর হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘লড়াই আমাদের সবার। দেশের মানুষের অধিকার আদায়েত জন্য এ লড়াই আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে। এই আন্দোলন জয়যুক্ত হবেই, সরকার যতই অপচেষ্টা চালাক না কেন।’
সমাবেশে জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদের) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া আক্তার বলেন, ‘মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে যে মায়েরা এসেছে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা বলতে, আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়—সেই দাবি জানাতে তাদেরকে কেন পুলিশ ধাক্কা দিল, যারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন ভাতা পায়। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্পষ্ট জানতে চাই, “আপনি কি দেশের প্রতিটি জায়গা, মহল্লাকে ভাগ করে ফেলছেন? তাহলে কোন ভাগটা আমাদের জন্য দয়া করে বলবেন কী?” প্লিজ বলুন, তাহলে সেখানে আমরা দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে কিছু কথা বলি।’
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার নির্বাচন নিয়ে নাটক করছে। এটা কোনো নির্বাচনই নয়। এ ধরনের অরুচিকর নাটকে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। শুধুমাত্র আমাদের দাবি-দাওয়া পেশ করার জায়গাটা করে দিন। কারণ আমরা কথা বলতে চাই।’
সমাবেশে সমাপনী বক্তা হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘মায়ের ডাকের আন্দোলন শুধু আজকের না, এরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই সংগ্রাম করে আসছে। কারণ এই সরকার ১৫ বছর ধরে একের পর এক গুম, হত্যা চালিয়ে আসছে এবং মায়েদের বুক খালি করছে। আমরা দেখতে পার,ছি কীভাবে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার জনগনের লাশের ওপর দিয়ে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। জনগনের টাকায় যারা বেতন পায়, তাদেরকে পর্যন্ত লেলিয়ে দিয়েছে ক্ষমতায় থাকার জন্য। তারা হেলমেট বাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনী বানিয়ে মানুষকে ঘরে ঘরে গিয়ে অত্যাচার করছে। সেটার কোনো বিচার নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনে তিনজন শ্রমিক মারা গেছে, তাদের পরিবারের কী অবস্থা, তারা কীভাবে দিন পার করছে—সেগুলো নিয়ে কোনো কথা নাই, তাদের কোনো বিচার নাই। কিন্তু একজন পুলিশ মারা গেছে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়। বিচার নাই কারণ বর্তমান সরকার জবাবদিহী বিহীন সরকার, বিনা ভোটের অবৈধ সরকার। তারা আজকে আবার নতুন করে পাতানো নির্বাচন খেলা খেলছে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও ডা. ফয়জুল হাকিম।