এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, আজকে দেশের জনগণ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ নাম্বার ওয়ান। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকবো। এই সরকারের নির্বাচন মানবো না।
রোববার সকালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ১১টায় মানববন্ধন শুরু হওয়ার আগেই প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও গুম-খুন কারাবন্দি নেতাদের স্বজনরা জড়ো হন। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে সেলিমা রহমান বলেন, আজকে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপিকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে। তিনি এই কথা বলার কে? তিনি তো ভোটারবিহীন নির্বাচনে একজন মন্ত্রী।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গত ২৮শে অক্টোবরের পর আমাদের প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। অনেক ভাই ও বোনেরা ঘরে ঘুমাতে পারে না।ছেলেকে না পেলে মাকে, ভাইকে, বোন কিংবা বাবাকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেককে ধরে নিয়ে যায় এবং মুক্তিপণ দাবি করে। এটা একটা ডাইনি সরকার। তারা নিজেরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের মহাসমাবেশে হামলা করে পণ্ড করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কারাগারে বিএনপির নেতাকর্মীদের ন্যায্য অধিকার দেয়া হচ্ছে না। আজকে দেশের বিচার বিভাগ চলছে একজনের নির্দেশে। বিশ্বের কোথাও বাংলাদেশের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন নেই। সরকার বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ করে রেখে একতরফা নির্বাচন করছে।
সেলিমা রহমান আরও বলেন, বর্তমান লোভী ও ফ্যাসিস্ট সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রেখে তিলে তিলে মারতে চায়। আমরা সকল জনগণকে বলবো- এই সরকারকে না বলুন। আপানারা দোকানপাট বন্ধ রাখুন। বিদেশ ভ্রমণ বাদ দিন। বিয়ে শাদির কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করুন। দেশে নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। পিয়াজের কেজি কত? এভাবে বেশিদিন চলবে না। আজকে ডান বাম সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। অতি শিগগিরই বাংলাদেশের জনগণ বর্তমান আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার ক্রমাগতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং আমরা মাঠে থাকবো।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়াবহ নির্যাতন করা হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান শাসন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। গুম-খুন ও হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। আজকে দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার নেই। নিম্ন আদালতে রায় পড়ে শোনানো হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিকেও সাজা দেয়া হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মানবাধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বর্তমান সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা মীর নেওয়াজ আলী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, নাজিম উদ্দিন আলম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, রেহানা আক্তার রানু, এ্যাবের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হাছিন আহমেদ, সহসভাপতি প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার। এসময় সাবেক ছাত্রদল নেতা রাজীব আহসান পাপ্পিসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে রুহুল আমিন গাজী, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ডা. সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল হাই সিকদার, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, সাংবাদিক রাশেদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।