শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

মুমিনদের পরস্পর ভালোবাসা

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৬২ বার

আল্লাহর অনুগত বান্দারা সুযোগ পেলেই দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে মিসকিনের মতো ফরিয়াদ করে! অশ্রু ঝরিয়ে নীরবে নিভৃতে মহান প্রতিপালকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে- হে মহীয়ান, গরিয়ান, দয়ালু মাবুদ আপনি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি তো দয়ার আধার। আপনি ছাড়া দুনিয়ার জমিনে আমার কোনো সাহায্যকারী নেই। আপনি তো রাহমানুর রাহিম। এভাবে কাকুতি-মিনতি করে দোয়ার সময় কেউ যদি অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করে তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার দোয়া দ্রুত কবুল করেন।

হজরত উম্মুদ দারদা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘এক মুসলমান যখন অপর মুসলমানের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করে তখন তা কবুল করা হয়। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেয়া হয়। যখনই সে অপর মুসলমানের জন্য কল্যাণের দোয়া করে তখনই সেই ফেরেশতা বলে, আমিন, তোমাকেও যেন অনুরূপ দান করা হয়।’ (মুসলিম-৮৬)

পরস্পরের মধ্যে সালাম দেয়াও একটি দোয়া। সালাম মানে শান্তি, তাই মুমিনরা পরস্পর সালাম বিনিময়েই অন্তরে প্রশান্তি লাভ করে। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, ‘লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে’। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ তখন আল্লাহর রাসূল সা: তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন ‘তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে’। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরো একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসূলুল্লাহ সা: তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, ‘লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে’। (আবু দাউদ)

রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, ‘কেউ-ই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দেবো না, কী করলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো- তোমরা পরস্পর বেশি বেশি সালাম বিনিময় করবে।’ (মুসলিম-৯৮)

তাই তো রাহমানুর রাহিম-দয়াবান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে বলেন- ‘যখন তোমাদের অভিবাদন জানানো হয় (সালাম দেয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা (উত্তরে) উত্তম অভিবাদন জানাও অথবা তারই অনুরূপ করো।’ (সূরা নিসা- ৮৬)

সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর আল্লাহ তায়ালা আর কত সুন্দর তার রাসূল মুহাম্মদ সা: এবং কত সুন্দর কুরআনুল কারিমের শিক্ষা-শিষ্টাচার।
মুমিনরা পরস্পর শুধু সালাম বিনিময়েই ক্ষান্ত নয়; জীবন চলার পথে তারা পরস্পর সহযোগিতা-সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার মেলবন্ধনে আবদ্ধ। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কোনো একটি কঠিন বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত মানুষের অভাব দূর করে দেবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাব দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ততক্ষণ পর্যন্ত সহযোগিতা করেন, যতক্ষণ সে তার অন্য ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে।’ (মুসলিম-২৬৯৯)

আরেক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিনে তাঁর সুশীতল ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না : ১. ন্যায় বিচারক ইমাম বা নেতা; ২. মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল যুবক; ৩. মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি- যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় আবার তাতে ফিরে আসা পর্যন্ত মন ব্যাকুল থাকে; ৪. এমন দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই পরস্পর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়; ৫. এমন ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে অশ্রু ঝরায়; ৬. এমন লোক, যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী ব্যভিচারের জন্য আহ্বান করেছে, আর তখন সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে- আমি তো আল্লাহকে ভয় করি; ৭. যে ব্যক্তি এমন গোপনীয়তা রক্ষা করে দান-সাদকা করে যে, তার ডান হাত কী দান করল বাম হাতও তা জানতে পারে না।’

রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসল, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করল, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করল এবং আল্লাহর জন্য কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকল, সেই ব্যক্তি নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।’ (আহমাদ-৪৬৮৩)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: বর্ণনা করেন- এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে সর্বোত্তম কাজ কী? তিনি বললেন, ‘(ক্ষুধার্তকে) খাবার দান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে (ব্যাপকভাবে) সালাম দেবে।’ (মিশকাত)
এক মুসলমান যখন অন্য মুসলমানের কল্যাণ কামনা করে তখন তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে। দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তির জন্য একটি অনন্য সোপান হচ্ছে মুমিনদের পরস্পর ভালোবাসা।

আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা: বর্ণনা করেন- আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘হে মানুষ! তোমরা সালাম প্রচার করো, (ক্ষুধার্তকে) খাবার দান করো, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখো এবং মানুষ যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা সালাত আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘেœ জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের উদ্দেশে বলেছেন- ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।’ (সূরা আনফাল-৪৬)

হজরত আবু উমামাহ রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর সর্বাধিক কাছাকাছি মানুষ ওই ব্যক্তি; যে সর্বপ্রথম সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ)

লেখক :

  • নাজমুল হুদা মজনু

সাংবাদিক

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com